সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে মাশুলে ছাড় চায় ভুটান

নিউজ ডেস্ক:ভারতের পর এবার ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পেতে যাচ্ছে ভুটান। বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যকার বাণিজ্য চুক্তি এবং সই হতে যাওয়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) আওতায় এ ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিতে যাচ্ছে ঢাকা। চুক্তিতে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে নৌ ও সড়ক পথে সরাসরি পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে বাংলাদেশের কাছে মাশুলে ছাড় চায় ভুটান।
পররাষ্ট্র ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আগামী ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের ঢাকা সফরে আশার কথা রয়েছে। আর এর প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আসন্ন সফরকে ঘিরে দুই দেশের সম্ভাব্য সমঝোতা ও চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিদ্যুৎ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, পর্যটন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু এবং দু’দেশের মধ্যে মানুষে মানুষে সংযোগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতায় ট্রানজিট ও কানেকটিভিটি, বিশেষ করে বিবিআইন এর অগ্রগতি এবং জলবিদ্যুৎ উত্পাদন নিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটান -এই তিন দেশের সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর ব্যবহার নিয়ে মাশুলে ছাড় চেয়েছে ভুটান।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দু’দেশের মধ্যে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের রুটগুলো যাচাই করতে গত ২৫ মার্চ ভুটানের একটি প্রতিনিধি দল এসেছে। তারা রুট যাচাই করছে।’

তিনি জানান, ‘ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সফরেই চুক্তিটি সই হবে -এমনটি আশা করা হচ্ছে। যদিও বন্দর ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশের কাছে মাশুলে ছাড় চেয়েছে দেশটি। বিষয়টি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।’

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম। চাহিদার সিংহভাগ আমদানি রফতানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এ বন্দর দিয়ে। কিন্তু বন্দরটিতে একটি জাহাজ আসলে তার নোঙ্গর থেকে শুরু করে কন্টেইনার আনলোড করে আবারও জাহাজটিতে কন্টেইনার লোড করা পর্যন্ত যে মাশুলগুলো ধরা হয় তার সিংহভাগই ১৯৮৬ সালে নির্ধারিত মাশুল।

২০১৯ সালেও সেই ৩৩ বছরের পুরনো নির্ধারিত মাশুলই আদায় করা হচ্ছে। আর নির্ধারিত কাঠামোই আগে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের মাশুল আদায় করে থাকতো। তবে ২০১৩ সালে মংলা বন্দর আলাদা গেজেটের মাধ্যমে নিজস্ব মাশুল নির্ধারণ করেছে। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের ক্ষেত্রে নির্ধারিত এ মাশুলই নেয়া হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, একেতো মাশুল কম। তার ওপর এখানেও ছাড় খুঁজছে থিম্পু। বিশ্বের প্রতিটি বন্দরে নিয়ম করে প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছরে সমুদ্র বন্দরের মাশুলগুলো পুনর্বিবেচনা করা হয়। মাশুল নির্ধারণ করে নিজ দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য প্রয়োজনে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ছাড় দিয়ে থাকে বন্দরগুলো। আর ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের মূল বন্দরের মাশুল বাড়েনি। তবে যেহেতু বিষয়টি এখন আর শুধু নিজ ব্যবহারকারীদের ওপর থাকছে না, এক্ষেত্রে মাশুল পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজনে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ছাড় দিতে পারে সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষরা।

বন্দর ব্যবহারে মাশুল ছাড়ের অনুরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ বলেন, বন্দর ব্যবহারের মাশুল মূলত দেশীয় হারই প্রযোজ্য। আলোচনার মাধ্যমে এটি নিষ্পত্তি করা হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ থেকে মোটা দাগে ৫২ ধরনের মাশুল আদায় করা হয়। এর মধ্যে ৩১ ধরনের মাশুল আদায় হয় ১৯৮৬ সালের গেজেট অনুযায়ী। আর ১৪ ধরনের মাশুল আদায় হয় ১৯৯০ সালের গেজেট অনুযায়ী। এছাড়া ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যবহারে যোগ হয় গুদামজাতকরণ, কন্টেইনার এবং নন-সিপিএ যন্ত্রপাতি ব্যবহার মাশুল।

এর বাইরে ১৯৮৯, ১৯৯১, ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কিছু সেবার মাশুল বাড়ানো হয়। এ মাশুল অর্থমন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় আলোচনার করে গেজেট আকারে প্রকাশ করে।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য ১৯৮৬ সালে প্রথম বিস্তারিত মাশুল কাঠামো নির্ধারণ করা হয়। তবে ১৯৯০ সালে তার বেশ কিছু সেবার মাশুল পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাশুল নিয়ে কাজ করলেও খালি একটি সেবা যোগ করে মাশুল নির্ধারণ করে। বাকি পুরো মাশুল কাঠামোই ১৯৮৬ এবং ১৯৯০ সালের নির্ধারিত মাশুলেই থেকে গেছে। বন্দরে জাহাজের মাশুল নিয়ে সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৯ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ হয়েছে। যদিও ১৯৯০ সালের প্রকাশিত গেজেটের দরই সেখানে ধার্য করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  বলেন, ৩৩ বছর পুরোনো মাশুলেই আয় করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এটা অকল্পনীয়। বন্দরের বেতন থেকে শুরু করে অনুষঙ্গ খরচ সময়ে সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েছে। এতদিন মাশুল পুনর্মূল্যায়ন না হলেও এখন এটির মূল্যায়ন করে হালনাগাদ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।