সন্তানদের খাওয়াতে না পেরে মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা

কক্সবাজার সংবাদদাতা: কক্সবাজারকে লকডাউন করা হয়েছে ৫ দিন আগে। এরও পক্ষকাল আগে থেকেই কক্সবাজারের সর্বত্র পর্যটক আগমন এবং জনসমাবেশসহ জনযোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে জনজীবন। কর্মক্ষেত্র বন্ধ হওয়ায় শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং ছিন্নমূল পরিবারগুলো অনটনে কাহিল হতে থাকেন।

প্রশাসনের পক্ষে দেয়া ত্রাণ নিয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপর্যাপ্ততার কারণে জেলার অনেক দরিদ্র পরিবার ত্রাণ সহায়তা না পেয়ে নীরবে গুমড়ে মরছে। তেমনই এক শ্রমজীবী পরিবারের মা সন্তানদের খাবার দিতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষোভে-অভিমানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।

গত রোববার দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কুতুবদিয়াপাড়ার ফার্ম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় কাউন্সিলর ত্রাণের তালিকায় নিজ স্বজনদের স্থান দিতে গিয়ে মূল শ্রমজীবী কর্মহীনদের তালিকার বাইরে রাখায় এমনটি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

সমাজ সর্দার নুরুল হক জানান, বাড়িতে খাবার নাই। বাইরে কাজে যেতে পারেনি শ্রমজীবী জসিম। অভাবের কারণে সন্তানদের খাবার যোগাড় করতে না পেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান জসিমের স্ত্রী। ঘরের চালার গাছে মায়ের ফাঁস লাগানোর বিষয়টি তার এক ছেলে দেখে চিৎকার দিলে পাশের বাড়ির লোকজনসহ অন্যরা এসে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আতিক উল্লাহ কোম্পানি ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজস্ব তহবিল থেকে এক সপ্তাহ চলার মতো খাবার কিনে দেন তাদের।

স্থানীয়দের মতে, এটি শ্রমনির্ভর আয়ের এলাকা। লোকজন কাজ করতে পারলে কারও কাছে হাত পাতে না। কিন্তু এখন কাজ নেই, তাই খাবার নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো।

সচেতন মহলের মতে, বিচ্ছিন্নভাবে এইঘটনা প্রকাশ পেলেও এরকম অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আতিকুর রহমান চৌধুরী জানান, ২০১১ সালের পরিসংখ্যান মতে কক্সবাজার জেলায় লোকসংখ্যা ২২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯০ জন। আর সকল শ্রেণি মিলে পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৪টি। এ সংখ্যা ২০২১ সালের পরিসংখ্যানে আরো বাড়বে।

এ পরিসংখ্যান মতে, পুরো জেলায় হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সংখ্যা মূল পরিসংখ্যানের তিন চতুর্থাংশ। সে হিসেবে প্রায় তিন লাখের অধিক পরিবার বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে।