সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার দাবিতে উত্তাল সারাদেশ

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক: সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার জোর দাবি উঠছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখতে হবে এই একটি দাবিতেই সোচ্চার হয়ে ওঠেছে বিভিন্ন সংগঠন। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত সংবাদ দেয়া হলো-
রাজশাহী: রাজশাহী মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবে গতকাল জুমুয়াবার বিকাল ৪টায় পবিত্র দ্বীন ইসলাম সমুন্নত জাগ্রত মুসলিম সমাজ-এর উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অপরিবর্তিত রাখার অপরিহার্য্যতা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এদেশে দ্বীন ইসলামকে দেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার জোর দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, আগামী ২৭ মার্চ বাংলাদেশ হাইকোটে এর রিট আবদেনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উঠিয়ে দেয়া হতে পারে। আমরা সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেওয়ার এ উদ্যোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠি মুসলমান। এদেশের মুসলমানরা স্বভাবগতভাবেই ধর্মপ্রাণ ও ধর্মভীরু। যে দেশে ১০ লাখ মসজিদ রয়েছে। যেদেশে প্রতি জুমুয়ার জামাতে কোটি কোটি লোকের সমাগম হয়। সেদেশে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের ধর্ম হিসেবে রাষ্ট্রধর্ম হবে ‘ইসলাম’ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টিরও অধিক দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে। যেমন, খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা, স্পেন, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ব্রিটেনসহ ২৬টি দেশে ক্যাথলিক ও প্রোটেষ্ট্যান্ট মতবাদ তাদের রাষ্ট্রধর্ম। একমাত্র গ্রীসে অর্থডক্স মতবাদ তাদের রাষ্ট্রধর্ম। আবার ভুটান, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ ৫টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ। অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বে ২৭টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম হলো ইসলাম। তাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ হওয়াও স্বাভাবিক এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ বহাল থাকাও স্বাভাবিক।
বক্তারা আরো বলেন, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অন্তর্ভুক্ত করার অর্থ হল- রাষ্ট্রযন্ত্রে ইসলামের প্রাধান্য প্রতিফলিত করা। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে কী করে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মালিক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস উঠানো যেতে পারে? অতএব রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম উনার দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশের সংবিধানে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুনরায় বহাল করতে হবে, এটাই আলোচনা সভার দাবি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য মুহম্মদ জাকির হুসাইন, মুহম্মদ বাবুল আখতার রুবেল, মুহম্মদ আইনাল হক, মুহম্মদ গোলাম মুকতাদির, মুহম্মদ হাফিয আব্দুর রহিম, মুহম্মদ আব্দুল লতিফ রতন প্রমুখ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শান্তিমোড়ে হোটেল আল-নাহিদ কনফারেন্স হল-এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার দাবিতে।

পবিত্র দ্বীন ইসলাম সমুন্নত জাগ্রত মুসলিম সমাজ ব্যানারে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন- যারা বলে, রাষ্ট্রের কোন ধর্ম নেই, ধর্ম হলো ব্যক্তির, এছাড়া রাষ্ট্রে একাধিক ধর্মাবলম্বিরা রয়েছে ফলে কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। যদি তাই হয়, তাহলে একইভাবে রাষ্ট্রেরও কোন ভাষা থাকতে পারে না। কারন রাষ্ট্র কখনো কথা বলে না। কথা বলে ব্যক্তি। অথচ এদেশে চাকমা-মারমা-সাওতাল- বিহারীসহ বহু ভাষী লোক রয়েছে। তাই রাষ্ট্র ভাষা বাংলা কি বাদ দেয়া হবে? যদি না দেয়া হয় তাহলে রাস্ট্রধর্ম হিসেবেও ‘ইসলাম’ বাদ দেয়া যেতে পারে না।

পঞ্চদশ সংশোধনীর প্রসঙ্গ টেনে বক্তারা বলেন, পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিল সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। যে সংখ্যালঘুদের নেতা ও প্রতিনিধি। তার নেতৃত্বেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে এবং পাশ হয়েছে। সেই পঞ্চদশ সংশোধনীতেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রয়েছে। সংখ্যালঘুদের নেতা ও প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ স্বীকার করে নেয়ার পর এটা নিয়ে সংখ্যালঘুদের আর বিতর্কের কোন অবকাশ নেই।

বক্তারা বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে শুধু ইসলামকেই রাষ্ট্রধর্ম করা হয়নি বরং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মকেও ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তাহলে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে শুধু ইসলাম ধর্ম বাদ দেয়ার জন্য মামলা করা আবার অন্যান্য ধর্ম নিয়ে চুপ থাকার রহস্য কি?

পঞ্চদশ সংশোধনী পাশের সময় মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে দুইজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর রাষ্ট্রধর্মের বিরোধীতাও মেনে নেননি (যারা রাষ্ট্রধর্ম প্রবর্তনের সময় তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী ছিলেন) এবং যেটা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে একটি মীমাংসিত বিষয় সেখানে নতুন করে রাষ্ট্রধর্ম ইস্যু তোলা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

নির্বাচনী ওয়াদার কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে বক্তারা বলেন, সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের বিচারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল এবং তাদের বিচার করে সরকার জনগনের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। একইভাবে ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না” এটাও সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি ছিল। কিন্তু এটা এখনো আইনে পরিণত হয়নি এবং জনগণের সেই প্রত্যাশাও এখনো পূরণ হয়নি। যা দুঃখজনক।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য পেশ করেন, মুহম্মদ ফয়সালুর রহমান খান, আহবায়ক, পবিত্র দ্বীন ইসলাম সমুন্নত জাগ্রত মুসলিম সমাজ। এছাড়া আলোচনা করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, আলহাজ্ব মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম। আরো আলোচনা করেন বিশিষ্ট আইনজীবী এ্যাডভোকেট মুহম্মদ ফেরদৌসুল আলম ডলার।
আলোচনা সভায় গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে ছিলেন- জিটিভি, এটিএন বাংলা, ইন্ডিপেন্ডেন, সময়ের কন্ঠ স্বর, চ্যালেন আই, মাই টিভি, সকালের খবরসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

Rashtrodhormo andolon-1

চট্টগ্রাম: এদিকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে দুর্বার আন্দোলন ও দেশ অচলের হুমকি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চত্ত্বরে সমাবেশে হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, “আগামী ২৭ মার্চ উচ্চ আদালত সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বাদ দিলে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রাম জেলাছাড়াও বিভিন্ন জেলায় মসজিদে জুমার বয়ানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার ইস্যু নিয়ে আলোচনার খবর পাওয়া গেছে।

পাশাপাশি অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়ার ঝড় বইছে।