শেষ বিকেলে তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা তিনদিন সরকারি ছুটির পর সোমবার (২৮ মার্চ) থেকে খুলেছে সরকারি অফিস-আদালত। পবিত্র রমজান শুরুর পর সোমবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা কমতে শুরু করলে যানজট কেটে যায়। তবে, দুপুরের পর বিকেলের দিকে অফিস বন্ধ হওয়ায় ঘরে ফিরতে শুরু করে অফিসগামী মানুষ। এতে করে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

সোমবার দুপুরের পর রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, কাকরাইল, মগবাজার, হাতিরঝিল, রামপুরা, ধানমন্ডি, মহাখালী, বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, উত্তরা, বাড্ডা ও কালশী এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গুলশান অতিক্রম করে মহাখালী পর্যন্তও থেমে থেমে চলছে গাড়ি। বনানী থেকে গুলশান-২ এর দিকে গাড়ির চাপ কম থাকলেও নতুন বাজার থেকে গুলশান-২ ও গুলশান-১ থেকে গুলশান-২ এর দিকে বেশ যানজট চোখে পড়ে।

বনানী হয়ে কাকলী প্রধান সড়কে প্রবেশেও বেশ যানজটের সৃষ্টি হয়। আবার কাকলী ইউটার্নের আগে ও পরে থেমে থেমে এগোতে থাকে যানবাহন। মহাখালী রেলক্রসিংয়ে তীব্র যানজটের কবলে পড়েন নগরবাসী।

অন্যদিকে, রমজানেও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে চলছেন অভিভাবকরা। অফিসগামী ও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সকাল থেকেই হাজারো শিক্ষার্থী-শিক্ষকের যাতায়াত শুরু হয়। বাড়তি মানুষের চলাচল রাজধানীর সড়কের যানজটে বাড়তি মাত্রা যোগ করে।

মিরপুর-২ নম্বরে যেতে রাজধানীর মগবাজার মোড়ে বাসের জন্য অনেকক্ষণ করছেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, টানা তিনদিনের ছুটির পর আজ প্রথম দিন অফিসে যেতে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আবার অফিস শেষে বাসায় ফিরতে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বাস পেলেও সেগুলোতে তিল পরিমাণ ঠাঁই হচ্ছে না। রোজার একটা মাস এভাবে কষ্ট করে অফিসে যাওয়া-আসা করতে হবে।

কারওয়ান বাজারে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সোলাইমান হক বলেন, গত তিনদিনে খুব ভালোভাবে ডিউটি করেছি। তবে, আজ সকাল থেকে কারওয়ান বাজারে যানজট লেগে আছে। দুপুরের পর গাড়ির চাপ যেমন বেড়েছে, বেড়েছে মানুষের সংখ্যাও। ইফতারের আগে এ যানজট কমলে আমাদের ইফতার করতেও সুবিধা হবে।

রাজধানীর ভাটারা থেকে বনশ্রী এলাকায় অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, নতুন বাজারে এসে দেখি রাস্তা একদম বন্ধ। এ পরিস্থিতি দেখে বাসে না উঠে হেঁটে রওনা হয়ে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত আসি। পরে উত্তর বাড্ডা থেকে একটি রিকশা নিয়ে বনশ্রী পর্যন্ত আসি।

ট্রাফিক গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অন্যদিনের তুলনায় গাড়ির চাপ আজ একটু বেশি। তিনদিন বন্ধ থাকার পর আজ রাজধানীতে সব অফিস খুলেছে। এছাড়া রমজানের কারণে অফিস টাইম একটু পরিবর্তন হয়েছে। সবমিলিয়ে একসঙ্গে গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাই এ যানজট।

জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, রমজান মাস এলেই ঢাকা শহরে যানজট বেড়ে যায়। যানজট নিরসনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশসহ থানা পুলিশের সদস্যরাও সড়কে বাড়তি ডিউটি করেন। কিন্তু সড়কের দুই পাশ দিয়ে অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাথ দখলসহ যত্রতত্র গাড়ি চলাচলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা শহরের যানজট নিরসন পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা যারা সড়কে চলাচল করি এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

অন্যদিকে, রমজান শুরু আগে যানজট নিরসনে ১৫টি নির্দেশনা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।

ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনাগুলো হলো
১. ঢাকা মহানগরীতে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের অভ্যন্তরে কোনো বাসই সড়কে রেখে বা থামিয়ে যাত্রী ওঠানো যাবে না। টার্মিনালের ভেতরে থাকা অবস্থায় যাত্রীদের বাসের আসনগ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট বাসের প্রতিনিধিদের এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

২. ঢাকা মহানগরীতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো টার্মিনাল সংলগ্ন প্রধান সড়কের অংশ দখল করে দাঁড়াবে না।

৩. ভ্রমণকালে ঢাকা মহানগরের প্রবেশ ও বাহির পথের গণপরিবহনগুলো শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে যেন কোনো অযাচিত যানজটের সৃষ্টি না হয়।

৪. ঢাকা মহানগরী থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন থেকে নিবৃত থাকতে হবে।

৫. আন্তঃজেলা পরিবহনের যাত্রীরা বা গমনপ্রত্যাশীদের প্রধান সড়কে এসে অপেক্ষা বা দাঁড়িয়ে না থেকে টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করতে হবে।

৬. ঢাকা মহানগর থেকে দূরপাল্লার রুট পারমিটবিহীন বা অননুমোদিত রুটে কোনো বাস চলাচল করবে না। বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই এ বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলবেন এবং কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবেন।

৭. বাসের ভেতরে যাত্রীদের অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।

৮. সংশ্লিষ্ট যাত্রীরা অবশ্যই যানবাহনে টিকিট সঙ্গে রাখবেন।

৯. যাত্রীদের মালামাল নিজ হেফাজতে সাবধানে রাখবেন।

১০. কোনো যানবাহনেই ছাদের ওপর অতিরিক্ত যাত্রী বহন করবে না।

১১. যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে বাসচালকরা এমন কোনো অসম প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন না। এতে সড়কের শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটে ও জীবনহানির শঙ্কা থাকে।

১২. সকালে অফিসে গমনকারীদের পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে রেব হওয়া।

১৩. ইফতার সন্নিকটে বাসায় রওয়ানা না দিয়ে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়া।

১৪. স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিকশা, সিএনজি, বাস ইত্যাদি বাহন ব্যবহার না করে হেঁটে যাওয়া।

১৫. টার্মিনালভিত্তিক কাউন্টারগুলোতে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন করতে হবে।