শুঁটকিতে স্বাবলম্বী শত পরিবার

নিউজ ডেস্ক:গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায় শুঁটকি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছে শত পরিবার। ঐতিহ্যবাহী চান্দার বিলসহ বিভিন্ন বিল এলাকায় এখন চলছে শুঁটকি তৈরির ধুম। আর শুটকি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে উপজেলার বানিয়ারচর, জলিরপাড়, কলিগগ্রাম, রাহুথর, সাতপাড়ে গড়ে উঠেছে আড়ত। আর কয়েক দিন পরই এসব আড়তে লাখ লাখ টাকার শুঁটকি কেনাবেচা শুরু হবে ।
জানা যায়, সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, রংপুর, কিশোরগঞ্জ ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে এখানকার মানসম্পন্ন শুঁটকি কিনে নিয়ে যান। এ অঞ্চলের বৃহত্তম চান্দার বিলসহ অন্যান্য বিলের সুস্বাধু শোল, টাকি, পুঁটি, ভেদা, টেংরা, বাইম, কাকিলাসহ ছোট ছোট বিভিন্ন জাতের চিংড়ির শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
আশ্বিন থেকে ফালগুন এ ছয় মাস চান্দার বিলসহ অন্যান্য বিলের শুঁটকি তৈরির মৌসুম। আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ন পর্যন্ত বিলে জেলেদের জাল, বড়শি, আলোধারায় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে ও পৌষ থেকে ফালগুন পর্যন্ত বিলের কুয়া বা পুকুরগুলোতে সেচ দিয়ে মাছ ধরা হয়। আর এ মাছের সিংহভাগই ব্যবহৃত হয় এখানকার শুঁটকি তৈরিতে। বাকি মাছ চলে যায় ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। আর কিছু মাছ বিক্রি হয় স্থানীয় হাটবাজারে।
শুটকি তৈরির মৌসুমে পুরুষদের পাশাপাশি এখানকার মহিলারাও হয়ে পড়েন কর্মব্যস্ত। মাছ বাছাই, মাছ কাটা-ধোয়া, শুকানো এবং ঘরে তোলার কাজ মহিলারাই করে থাকেন। শুঁটকি মৌসুমে এলাকার টেকেরহাট বন্দর, রাজৈর, জলিরপাড়, বানিয়ারচর ও সাতপাড়ের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোরও কর্মতৎপরতা অনেকগুণ বেড়ে যায়। এখানকার শুঁটকির উচ্চমান ও এখানে নিরাপদ ব্যবসার সুযোগ থাকার জন্যই বহিরাগত পাইকাররা প্রতি বছরই এ এলাকায় আসেন। শুঁটকি ব্যবসার জন্য ডিডি বা টিটির মাধ্যমে পাইকারদের আনা টাকা এখানকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দ্রুত সরবরাহ করতে না পারায় সময়মতো শুঁটকি ক্রয়ে বিঘœ ঘটে বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
মাছ বাছাই করতে আসা মহিলারা জানান, আমরা এখানে মাছ কাটা, ধোয়া, বাছাইয়ের কাজ করে বাড়তি আয় করছি। প্রতিদিন কাজ করে ৬০ থেকে ৭০ টাকা মজুরি পাই। অনেকেই মাছের পেটা বা তেলের বিনিময়ে কাজ করেন।
বানিয়ারচরের অমল বালা জানান, আমি অনেক বছর ধরে শুঁটকি তৈরি করে আসছি। প্রাকৃতিক মাছ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার কারণে আগের তুলনায় শুঁটকির উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, মিঠা পানির মাছের শুঁটকির চাহিদা বেশি থাকায় এখানকার জেলেরা শুঁটকি তৈরি করে থাকে। তাছাড়া এখানকার প্রায় শত পরিবার শুঁটকি তৈরি করে সেগুলো বাজারজাত করে পরিবারের অভাব-অনটন দূর করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
জলিরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান অখিল বৈরাগি জানান, এখানকার অভাবি পরিবার ও শিক্ষিত বেকার যুবকরাও এ কাজে মনোযোগী হয়েছেন। অনেকেই মিঠাপানির শুঁটকি তৈরি করে সেগুলো বাজারজাত করে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।