শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ

রাজশাহী সংবাদদাতা: তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ভয়াল ছোবল থেকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) হামিদুল হক। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতে ধূমপানে আকৃষ্ট হয়ে অকালেই ঝরে না যায় সেজন্য তিনি রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে দোকানগুলোতে তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে তামাকের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অবৈধ ব্যবসায় মেতে উঠেছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজপড়–য়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধূমপানে আকৃষ্ট করতে কোম্পানিগুলো নানা অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। অপকৌশলগুলোর মধ্যে তামাকপণ্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে চটকদার তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপন, পুরস্কার-প্রণোদনা, শিশুখাদ্যের পাশে চোখ জুড়ানো তামাকপণ্যের অবৈধ ডিসপ্লে¬ অন্যতম।

শিক্ষার্থীদের ধূমপানে আকৃষ্ট করার এমন অপকৌশলের কাছে হার মেনে গিয়ে রাজশাহীর অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অকালেই ঝরে পড়ছে। প্রথমে ধূমপান দিয়ে শুরু করে মাদকের সর্বনাশা নেশায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক কোমলমতি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে।

রাজশাহীর এসিডির কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম শামীম বলেন, বতর্মানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশই তরুণ ও যুবক শ্রেণি। আর এজন্যই স্কুল-কলেজপড়–য়া কোমলমতি মেধাবী তরুণ ও যুবক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তামাকের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর টার্গেটে পরিণত হয়েছে। তাদের অপকৌশলগুলোর অন্যতম হলো-এই ৪৯ শতাংশ তরুণ-যুবক শ্রেণিকে যদি তামাকের ভয়াল ছোবলে আকৃষ্ট করা যায় তাহলে তাদের ব্যবসা শতভাগ সফল। কেননা, যে একবার ধূমপানে আকৃষ্ট হবে তাকে ধূমপান থেকে বিরত রাখা খুবই কষ্টকর। আর এজন্যই ৪৯ শতাংশ তরুণ-যুবক শ্রেণি তামাক কোম্পানিগুলোর টার্গেট।

এসিডির ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম) শারমিন সুবরীনা বলেন, চলতি বছরের শুরুতে রাজশাহী মহানগরীতে তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ বিজ্ঞাপন-প্রণোদনা কী পরিমাণের রয়েছে তার ওপর এসিডি একটি জরিপ পরিচালানা করে। জরিপে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১শ মিটারের মধ্যে অবস্থিত দোকানগুলোর ৭৭.৯৫ শতাংশ দোকানে তামাকপণ্য বিক্রি করা হয়। এই দোকানগুলোর ৮২ শতাংশ দোকানে তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ বিজ্ঞাপন, পুরস্কার-প্রণোদন প্রদর্শিত হচ্ছে।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, তামাকেই কোমলমতি শিশুরা মাদকের জীবননাশা নেশায় আকৃষ্ট হচ্ছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে যারা তামাকপণ্য বিক্রি করছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের তা বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিলেই চলবে না। পাশাপাশি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তার আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া নির্দেশ দিতে হবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) হামিদুল হক বলেন, তামাক হলো মাদকের ভয়াবহ নেশায় আকৃষ্ট হওয়ার প্রথম ধাপ। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের দোকানগুলোতে তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যেই প্রাথমিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের দোকানিদের নির্দেশ দিয়েছি, আপনারা বিভিন্ন ধরনের খাবার বিক্রি করেন, তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তামাকজাতপণ্য বিক্রি করতে পারবেন না। এই নির্দেশনা না মানলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তামাকপণ্য জব্দের একটা উদ্যোগ নিয়েছি।