শরীয়তবিরোধী শর্ত আরোপ করায় ধর্মপ্রতিমন্ত্রীকে লিগ্যাল নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মসজিদে জামায়াতে নামাজ আদায়ে কাতারের মাঝে ফাঁক ফাঁক করে দাঁড়ানোর শরীয়তবিরোধী শর্ত আরোপ করায় ধর্মপ্রতিমন্ত্রীকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন মুহম্মদ তাজ জামে মসজিদের খতীব আল্লামা আবুল খায়ের মুহম্মদ আজিজুল্লাহ। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবি মুহম্মদ মাসুদুজ্জামান তার পক্ষ থেকে নোটিশটি পাঠান।

নোটিশে গত ৬ মে ২০২০ তারিখে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশের মসজিদসমূহে জামায়াতে নামাজ পড়ার অনুমতির বিজ্ঞপ্তির ৪ ও ৫ নং শর্তসমূহে উল্লেখিত: কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তিন ফুট পরপর দাঁড়াতে হবে এবং এক কাতার অন্তর অন্তর [অর্থাৎ এক কাতার বাদ দিয়ে] কাতার করতে হবে; এই নির্দেশনা লংঘিত হলে মসজিদ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ উল্লেখিত নির্দেশনাকে শরীয়ত পরিপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করে নোটিশদাতা জানিয়েছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিছু পবিত্র নির্দেশনা মুবারক দিয়েছেন, যা হলো– তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও আর পরস্পর মিলে দাঁড়াও। [পবিত্র বুখারী শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ নং- ৭১৯] -তোমরা কাতার সোজা কর, কাঁধের সাথে কাঁধ বরাবর কর, ফাঁক বন্ধ কর, শয়তানের জন্য কোন ফাঁক রাখবে না। যে ব্যক্তি কাতারের সংযোগ স্থাপন করে, মহান আল্লাহ পাক তিনিও তার সাথে সংযোগ স্থাপন করেন, আর যে কাতার ছিন্ন করে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সাথে সংযোগ ছিন্ন করেন। [পবিত্র আবু দাউদ শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ নং- ৬৬৬] – তোমারা [নামাজের কাতারে] সোজা হয়ে দাঁড়াও, বিচ্ছিন্ন হয়ো না, তাহলে তোমাদের অন্তরে অনৈক্য সৃষ্টি হবে। [পবিত্র নাসাঈ শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ নং- ৮১২]- হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা যেভাবে তাদের প্রতিপালকের সামনে লাইন বেঁধে দাঁড়ায়, তোমরা কি সেভাবে লাইন বাঁধবে না?
হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বললেন, হে আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা তাদের রবের সামনে কাতারবন্দী হন? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তারা প্রথম লাইন (আগে) পূর্ণ করে এবং পরস্পরের সাথে মিলে দাঁড়ায়।” [পবিত্র মুসলিম শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ নং- ৮৫৪] – নিশ্চয়ই মহমান আল্লাহ পাক ও উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যারা কাতারসমূহকে সংযুক্ত করে। আর যে ব্যক্তি ফাঁক বন্ধ করল, এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। [পবিত্র সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ নং- ৯৯৫] – বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বলেছেন, [নামাজের কাতারে] আমাদের প্রত্যেকেই তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম। [পবিত্র বুখারী শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ নং- ৭২৫]

সম্মানিত হানাফী মাযহাবের ফিকহের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘বাদাইউস সানাই’-তে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে: “আর যখন কাতারে দাঁড়াবে তখন পরস্পর মিলে দাঁড়াবে এবং কাঁধের সাথে কাঁধ বরাবর করবে; কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন: তোমরা পরস্পর মিলে দাঁড়াও এবং কাঁধের সাধে কাঁধ মিলাও।”

দুই কাতারের মধ্যবর্তী দূরত্ব কমানোর ব্যাপারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, তোমরা [নামাজের] কাতারসমূহে মিলে মিশে দাঁড়াবে।

এক কাতারকে অপর কাতারের নিকট রাখবে। পরস্পর কাধেঁ কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে। ওই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি চাক্ষুস দেখতে পাচ্ছি, কাতারের খালি [ফাঁকা] জায়গাতে শয়তান যেন একটি বকরীর বাচ্চার ন্যায় প্রবেশ করছে।” [পবিত্র আবু দাউদ শরীফ, পবিত্র হাদীস শরীফ নং- ৬৬৭]

নোটিশে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফের এতদ্বয় দলীল প্রদান করে নোটিশদাতা জানান, জামায়াতের কাতারের ক্ষেত্রে তিন ফুট দূরত্ব কিংবা এক কাতার বাদ রেখে আরেক কাতারে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ পবিত্র হাদীস শরীফ কিংবা শারীয়াতের নির্দেশনায় নেই। পবিত্র ইসলামী শারীয়াতে অসুস্থ ব্যক্তিকে মসজিদে না আসার সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু কারো অসুস্থতার অজুহাতে জামায়াতের কাতারে ফাঁক রাখা কিংবা এক কাতার বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ পবিত্র ও সম্মানিত শরীয়াতে নেই। সুতরাং ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ৬ মে ২০২০ তারিখে জারিকৃত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে প্রদত্ত ৪ ও ৫ নং শর্তসমূহ পবিত্র দ্বীন ইসলামের পরিপন্থী। সাংবিধানিকভাবে যেহেতু বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সুতরাং ইসলামী আক্বীদাসমূহ রাষ্ট্র দ্বারা সুরক্ষিত। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মুসলিমদের নিজ দ্বীন পালনের অধিকারও রয়েছে। জামায়াতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে কাতারে ফাঁক না রেখে দাঁড়ানোর দ্বীনি অধিকার আমার মক্কেলসহ বাংলাদেশের সকল মুসলিমের রয়েছে। অথচ আপনি বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার পালনে বাধা সৃষ্টি করেছেন। সংবিধান সমুন্নত রাখার শপথ গ্রহণকারী একজন দায়িত্বশীল পদাধিকারী হিসেবে আপনার কাছে এটা মোটেও প্রত্যাশিত নয়।

নোটিশে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ধর্র্ম মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত উল্লেখিত জরুরি বিজ্ঞপ্তির ৪ ও ৫ নং শর্তসমূহ প্রত্যাহার করে নেয়ার আহবান জানানো হয়। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।