লালশাকে লাভবান কৃষক

লালশাকে লাভবান কৃষক

নিউজ ডেস্ক: লালশাক চাষ করে লাভবান হচ্ছেন হবিগঞ্জের কৃষক। জমি তৈরি থেকে বীজ রোপণের পর মাত্র ২৫ থেকে ৩০ দিনের মাথায় শাক বিক্রি করতে পারছেন কৃষক। ফলে অল্প সময় এখন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। বাহুবল উপজেলার হাফিজপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে বিক্রির জন্য রোপিত লালশাক সংগ্রহ করেন কৃষক।

কৃষক তৌহিদ মিয়া জানান, একই সঙ্গে জমিতে খিরা ও লালশাকের বীজ রোপণ করেন। লালশাক বিক্রির উপযুক্ত হয়েছে। তাই পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। পাইকার শ্রমিক নিয়ে জমি থেকে শাক সংগ্রহ করে নিয়েছে। তিনি পাইকারের কাছে ১৫ শতক জমির লালশাক বিক্রি করে ১২ হাজার টাকা পেয়েছেন। পাইকারি বাজারে প্রতি শাক ৭০ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন। তিনি জানান, শাক নেওয়ার পর খিরা গাছের পরিচর্যা করা হচ্ছে। আশা করছি খিরারও অধিক ফলন হবে।

এক জমিতে বারোমাস ফসল চাষে পরামর্শ প্রদান করেন উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম। কৃষক তৌহিদ মিয়া জানান, শুধু আমি নই; এলাকার অন্যান্য চাষিও বারোমাস ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

লালশাকের চাষাবাদ নিয়ে কথা হয় বাহুবল উপজেলার উপজেলার ডুবাঐ গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সাইফুল, সাহেদ আলী, আবুল হাসেন, হিলালপুরের আবিদ আলী, ছুরত আলী, নানু মিয়ার সঙ্গে। তারা জানান, জমিতে লালশাকের চাষাবাদ করে বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যাচ্ছে। বাজারে লালশাকের চাহিদা রয়েছে। এর চাষাবাদে তেমন একটা সার প্রয়োগ করতে হয় না।  তবে জমি প্রস্তুতের সময় শুকনো গোবর দিলে লালশাকের ফলন অধিক হয়। তারা শুধু লালশাক নয়। তারা অন্যান্য শাকসবজিও চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এখানের মতো জেলার স্থানে স্থানে কৃষক লালশাকের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, লালশাক চাষে তেমন একটা শ্রম দিতে হয় না। জমি প্রস্তুত করে বীজ রোপণ করার ৩০ দিনের মাথায় লালশাক বিক্রি করা যায়। তেমন সারও দিতে হয় না; তবে অধিক বৃষ্টিতে লালশাক চাষে বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া কোনো কারণ নেই। সহজ বলেই স্থানে স্থানে কৃষক লালশাকের চাষ করছেন। লাভবানও হচ্ছেন। তার প্রমাণ কৃষক তৌহিদ মিয়া। তিনি ১৫ শতক জমিতে লালশাকের সঙ্গে খিরার বীজ রোপণ করেন। লালশাক বিক্রি করেছেন। খিরা গাছ কিছুটা বড় হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যে খিরার উৎপাদন শুরু হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল আউয়াল বলেন, লালশাক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর; তাই ছোট-বড় সবাই এটা খুব পছন্দ করে। যেহেতু এর চাহিদা সবার কাছেই আছে; তাই লালশাক চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন করে ও বাজারে বিক্রির পর বাড়তি আয় করাও সম্ভব।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, লালশাকের অনেক জাত রয়েছে। তবে লাল ও সবুজ শাক নামেই পরিচিত। সবচেয়ে বড় বিষয় মাত্র ২৫ থেকে ৩০ দিনের মাথায় এ শাক বিক্রি করা যায়। জমি তৈরি বাদে বছরে ৮ বার এ শাক চাষ করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর ১ বিঘা জমিতে ৪০ হাজার টাকা লাভ করা যায়। পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হলে খরচ কম লাগে। কীটনাশক লাগে না। জমি তৈরির সময় ভালো করে সার দিলে অনেক ভালো হয়। তবে দুই-তিন দিন অন্তর অন্তর পানি দিলে ফলন অধিক হবে। বাজারে লালশাকের চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষক লালশাক চাষে মনোযোগী হয়েছেন। অন্যান্য জেলার মতো হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে বারোমাস লালশাক চাষ হচ্ছে।