লাদাখে ভারতের ৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নিয়েছে চীন

আহত হয়েছে ৫৮ ভারতীয় সেনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীন পূর্ব লাদাখে ভারতীয় এলাকার ৬০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি অংশ দখল করে নিয়েছে। এশিয়ার দুই প্রতিবেশীর মধ্যে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে এক সিনিয়র ভারতীয় সেনা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

ডেইলি টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়, গত মাসে সীমান্ত সঙ্ঘর্ষের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার চীনা সৈন্য ভারতীয় এলাকায় ঢুকে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জোরদার করার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অব্যাহত প্রয়াসে ক্ষুব্ধ চীন এ ঘটনা ঘটায়।

এই পদক্ষেপ চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দক্ষিণ চীন সাগরে সম্প্রসারণ নীতির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। সেখানেও বেইজিং বিরোধপূর্ণ এলাকায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করছে এবং তা চ্যালেঞ্জহীনই থাকছে তার শ্রেয়তর সামরিক শক্তির কারণে।

জাতিসঙ্ঘ সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং সঙ্ঘাতের যেকোনো বৃদ্ধিতে দুই দেশের সাথে আলোচনা করতে চাচ্ছে।

চৌশাল এলাকার, এখানেই অনুপ্রবেশ ঘটেছে, কাউন্সিলর কনচুক স্ট্যানজিন টেলিগ্রাফকে বলে, অতীতে আমরা দুই সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়া দেখতাম এবং পরিস্থিতি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শান্ত হয়ে যেত। কিন্তু এই প্রথম আমরা এক মাসের বেশি সময় ধরে উত্তেজনা দেখছি। আমরা আমাদের জীবন ও ভূমি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

চলতি সপ্তাহে উত্তেজনা প্রশমনের কিছু খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে ঘটনাস্থলে কী ঘটছে, তা স্পষ্ট নয়। ভারত মুখরক্ষার চেষ্টা করছে কিনা তাও জানা যাচ্ছে না।

বেইজিং ও নয়া দিল্লি ১৯৬২ সালের যুদ্ধবিরতির পর থেকে চীনা তিব্বত ও ভারতীয় লাদাখের মধ্যে বিভক্তকারী লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের (এলএসি) দুই পাশে নিজ নিজ এলাকায় টহল দেয়।

শীত ও বসন্তকালে পূর্ব লাদাখে ভারতীয় টহল বন্ধ থাকে। ওই সময় ভারী তুষারপাতের ফলে এলাকাটি খুবই বিপজ্জনক থাকে।

তবে বর্তমান সংকটের কারণে চলতি বছর তারা শক্তি বাড়ানোর কাজে মনযোগ দেয়নি। আর চীনা সৈন্যরা এই সুযোগটি গ্রহণ করেছে। তারা মে মাসের ৫ ও ৬ তারিখে চারটি স্থানে এলএসি অতিক্রম করেছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি সিনিয়র সূত্র জানায় পানগঙ সো এলাকায় ৪০ কিলোমিটার, গালওয়ান রিভার এলাকায় ২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করা হয়েছে। এছাড়া হট স্প্রিংস ও ডেমচকেও অল্প কিছু এলাকায় অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

চীনা বাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে ঘুষাঘুষি ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৭০ ভারতীয় সৈন্য আহত হয়েছে।

চীন ও ভারতীয় সৈন্যদের সঙ্ঘর্ষের সময় অস্ত্র ব্যবহৃত হয় না। অস্ত্র ব্যবহার মানে পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ ঘোষণা বোঝায়।

ভারত স্বীকার করছে যে চীনা সৈন্যরা বেশ ভালো সংখ্যায় উপস্থিত রয়েছে। তারা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় চীনকে অধিকৃত ওইসব এলাকা থেকে সরে যেতে অনুরোধ করছে।

কিন্তু চীন পনগঙ সো এলাকায় প্রতিরক্ষা স্থাপনা নির্মাণ করেছ, নতুন সীমান্তে ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে এসেছে।

ভারতও তাদের শক্তি বাড়িয়েছে, তারা আর্টিলারি ও বফোর্স কামান নিয়ে গেছে লাদাখে।

ভারতকে চাপে রাখার পন্থা হিসেবে এ কাজটি করছে। কৌশলগত প্রতিযোগী ও প্রতিবেশী ভারত মোদির অধীনে ভারতের ক্রমবর্ধমান আস্ফালন তারা বরদাস্ত করতে প্রস্তুত নয়।

ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা বিশেষজ্ঞ লিন মিনওয়াং বলে, মোদির সার্বিক কূটনীতি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীত। ভারতের এই নীতিতে চীন সত্যিই খুবই হতাশ।

সীমান্তজুড়ে ভারতের অবকাঠামো নির্মাণকে বেইজিং পেছন থেকে ছুরিকাঘাত হিসেবে বিবেচনা করছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৃহত্তর কৌশলগত প্রতিযোগিতায় চাপে থাকার সময় ভারতের এই পদক্ষেপে চীন খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছে। এসব অবকাঠামোর মধ্যে চীনের উদীয়মান মিত্র নেপালের দাবি করা অঞ্চল লিপুলেখ দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণও রয়েছে।

চীন-ভারত সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ ও সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কান্তি প্রাসাদ বাজপাই বলে, ভারত চীনে সরবরাহ পাঠিয়েছে এবং মনে করছে যে চীনারা কতৃজ্ঞ নয়। আবার সরবরাহ পাঠানোর জন্য চীনারা সব দেশকে ধন্যবাদ জানালেও ভারতকে প্রকাশ্যে ধন্যবাদ দেয়নি।

মহামারী বিস্তারের প্রেক্ষাপটে অনেক দেশের মতো ভারতেও সমালোচনা হয়েছিল চীন থেকে বাজে চিকিৎসা সামগ্রী কেনার জন্য।

বাজপাই বলে, ভারতীয়রা মনে করে যে চীনারা তাদের সাথে প্রতারণা করেছে। চীনারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা উল্টা ভারতের প্রতারণার শিকার হয়েছে।