লকডাউন কুফল: ‘আগে তো জীবনটা বাঁচাই’

এখনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করুণ দশা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর দক্ষিণখান থানার প্রেমবাগান এলাকার ভাড়াটিয়া হাবীব পেশায় একজন ছোটখাটো ঠিকাদার। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নির্মিতব্য ভবনে রড, বালু, ইট ও সিমেন্ট সরবরাহ করেন। বাকিতে মালামাল দিয়ে পরে বিল নেন। ১৩ হাজার টাকা বাসাভাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলেমেয়েসহ তিন সন্তান এবং স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারের সব খরচ মিটিয়ে বেশ ভালোভাবেই দিন কাটাচ্ছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন ভাড়া বাসা ছেড়ে রাজধানীতে নিজের ফ্ল্যাটে উঠবেন। ফ্ল্যাট বুকিংও দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার থেকে লকডাউন আরোপ করার পর তার সব স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে গেছে।

লকডাউনের কারণে গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছেন। যেসব ভবনে ইট, বালু সরবরাহ করতেন সেখানে কাজ বন্ধ। বকেয়া বিলও পাচ্ছেন না। আয় না থাকায় তিনমাসের বাড়িভাড়াও বাকি পড়েছে। কোনো উপায় না দেখে আপাতত ঢাকা শহর ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাড়িওয়ালার কাছে ভাড়া দিতে না পারার অক্ষমতার কথা জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে ভাড়া মাফ করিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

সুজাউদ্দিন বলেন, ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে তা কখন কল্পনাও করেননি। আপাতত গাজীপুরের পুবাইলে শ্বশুর বাড়িতে একটি মাটির ঘরে উঠব। বাড়ির আশপাশে শাকসবজি চাষ করা হয়েছে। কোনোভাবে খেয়ে-পরে এ সময়টা পার করে দেব। আগে তো জীবনটা বাঁচাই।

ঠিকাদার সুজাউদ্দিন বলেন, লকডাউন পরিস্থিতির কারণে অনেক পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আসলে সবার আর্থিক টানাপড়েনের কারণে এমনটি করছেন বুঝতে পারলেও তাদের অবহেলা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবে বাড়িওয়ালা মানবিকতা দেখিয়ে তিন মাসের বাড়িভাড়া মাফ করে দেয়ায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই ঠিকাদার।
প্রেমবাগানের ওই বাড়ির মালিক নুরুল আলম লিটন জানান, বর্তমান পরিস্থিতির কারনে ওই ঠিকাদার সত্যিই বিপদে পড়েছেন। আগে ভাড়া নিয়মিতই পরিশোধ করলেও তিনমাসের ভাড়া বাকি পড়ে যায়। মানবিকতা দেখিয়েই তার কাছ থেকে ভাড়া না নিয়ে বাসা ছাড়ার অনুমতি দিয়েছি।