লকডাউনে অসহায় মানুষ: ‘দুধ কিনতে পারছি না, সন্তানদের ভাতের মাড় খাওয়াচ্ছি’

সন্তানদের ভাতের মাড় খাওয়াচ্ছি’

কুষ্টিয়া সংবাদাদাতা: ‘আমি ভূমিহীনদের একজন। দিনমজুর মানুষ। চল্লিশ দিন আগে আমার যমজ সন্তান হইছে। টানা লকডাউন চলছে। এ জন্য কাজকর্ম সব বন্ধ, আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। টাকার অভাবে যমজ দুই মেয়ের জন্য দুধ কিনতে পারছি না।’

অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন ৩০ বছর বয়সী রতন আলী। তিনি আরও বলেন, তাদের ভাতের মাড় খাওয়াচ্ছি। চরম দুর্দিনের ভেতরে আছি, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছি। বাচ্চার কষ্ট-কান্না সহ্য হচ্ছে না। দেশবাসীর কাছে আমি সাহায্য চাই।

রতন আলী কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরদিয়াড়পাড়া গ্রামের আমিন আলির ছেলে। ২৪ জুন স্থানীয় একটি ক্লিনিকে দুটি মেয়েসন্তানের জন্ম হয় তার। পরের জমিতে ঘর করে বসবাস করেন তিনি।

রতন আলী কাঁদতে কাঁদতে আরও বলেন, চরম একটা বিপদে পড়ে গেছি। ৪০ দিনের অবুঝ শিশু ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদে। শিশুরা মায়ের দুধ কম পাচ্ছে। তাদের মুখে দুধ কিনে তুলে দিতে পারি না। সন্তান জন্মের সময় আমার স্ত্রীকে ক্লিনিকে ভর্তি করতে হয়েছিল। তখন ধারদেনা করে ক্লিনিককে টাকা দিয়েছে। এই লকডাউনের মধ্যে কোনো কাজ নেই।’
তিনি আরও বলেন, বেকার বাড়িতে বসে আছি। দুধ কিনতে পারি না, শিশুদের ভাতের ফ্যান খাওয়াতে হয়। আমি দেশবাসীর কাছে সাহায্য চাই। যাতে ফুটফুটে দুই মেয়ে সন্তানকে দুধ কিনে খাওয়াতে পারি।’

রতন আলীর প্রতিবেশী কাওসার আলী বিশ্বাস বলেন, রতন একজন দিনমজুর। লকডাউনে কাজ না পাওয়ায় পুরো বেকার। টাকার অভাবে তিনি যমজ শিশুর জন্য দুধ কিনতে পারেন না। খুব কষ্টে দিন পার করছে পরিবারটি।

হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরী বলেন, আমি তাদের খোঁজ নিয়েছি। তারা খুবই কষ্টে দিন পার করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে যমজ শিশুর বাবাকে সহযোগিতা করেছি।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, লকডাউনে রতন আলী কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে তিনি যমজ সন্তানের বাবা হয়েছেন। অর্থের অভাবের কথা শুনে যমজ কন্যাশিশুর পরিবারকে কিছু খাদ্য ও শিশুখাদ্য দেওয়া হয়েছে।