রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের ৪ আদেশ

আন্তর্জাতিক আদালতের ৪ আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চারটি অন্তরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। আদালত সর্বসম্মতভাবে এ আদেশ জারি করেছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় আইসিজের প্রধান বিচারক আবদুল কাভি আহমেদ ইউসুফ আদেশ ঘোষণা করেন। আদেশ ঘোষণার শুরুতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলার পক্ষে রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও গণহত্যার যেসব আলামত আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেসব বিরোধের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিচারক ইউসুফ।

আদালত বলেছেন, গণহত্যা সনদের ২ নং ধারা অনুযায়ী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে একটি বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

বৃহস্পতিবার মামলার আদেশ ঘোষণায় জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালত বলেছে, গণহত্যা সনদের ৪১ ধারার আওতায় তিনটি অন্তর্বতী ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশের শর্তসমূহ বিরাজ করছে। গাম্বিয়া এই গোষ্ঠীর সুরক্ষায় অন্তর্বতী যেসব ব্যবস্থার আদেশ চেয়েছে; সেগুলোর প্রথম তিনটির লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

যে চার আদেশ দিলো আদালত:
>> মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধসহ গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ।
>> রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে আগামী চার মাসের মধ্যে মিয়ানমারকে অবশ্যই প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। প্রথম প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রতি ছয় মাস পরপর একই ধরনের প্রতিবেদন আদালতের কাছে উপস্থাপন করতে হবে।
>> গাম্বিয়া ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আদালতের কাছে প্রয়োজনীয় বিষয়ে আবেদন করতে পারবে।
>>মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের প্রমাণাদি সংরক্ষু করতে হবে।
এছাড়া, গণহত্যা সনদের ২নং ধারা অনুসারে রোহিঙ্গাদের বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত।
আদালতের পর্যবেক্ষণে যা বলা হয়েছে:
>> রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অধিকারের সুরক্ষায় এখনও কোনও ধরনের প্রস্তাব দেয়নি মিয়ানমার।
>> জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেয়ার দরকার হলেও মিয়ানমার তা করেনি।
>> দেশটিকে অবশ্যই গণহত্যার সনদ মানতে হবে।
>> আর কোনও ধরনের হত্যাকা- যাতে না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
>> দেশটির সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য সামরিক শাখা গণহত্যা সংঘটিত করবে না, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
>> রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সব ধরনের অপরাধের আলামত সংরক্ষণের নির্দেশ।
আইসিজের প্রধান বিচারক আবদুল কাভি আহমেদ ইউসুফ তার মন্তব্যে বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা অত্যন্ত ঝুঁকিতে আছেন। এছাড়া বাংলাদেশে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমার সরকার যে ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় বলেও আদালতের মন্তব্যে উঠে এসেছে।

অ্যাডহক আন্তর্জাতিক আদালত স্থাপনের পরামর্শ:
অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্যাতনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে নতুন একটি অ্যাডহক আন্তর্জাতিক আদালত স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘের র্যাপোটিয়ার ইয়াং হি লি। সে জানায়, মার্চে জেনেভাতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে আমি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেশ করবো। সেখানে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখবো। বসনিয়া হার্জেগোভিনায় যেভাবে গণহত্যার বিচার হয়েছে, এক্ষেত্রেও একই ধরনের সুপারিশ করবো আমি।