রোজার আগেই চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা

বিক্রি হচ্ছে না দেশীয় সুগার মিলের চিনি

নিউজ ডেস্ক : চিনিরোজা শুরু হতে এখনও দেড় মাসের বেশি বাকি, অথচ ৫০ টাকা কেজির চিনি এখনই ক্রেতাদের ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চিনি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তাই বাধ্য হয়ে এই দরে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে ক্রেতারা বলছেন, রমজান আসার অনেক আগেই বাজারে তার আঁচ পড়তে শুরু করেছে। গতবারের মতো এবারও রোজার আগেই বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যও বলছে, গত এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টিসিবির হিসাবে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৫০ টাকা। টিসিবির তথ্য মতে, গত এক মাসে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। গত সপ্তাহেও পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। রিফাইনারি ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী ইউসুফ মিয়া জানায়, ‘গত রোজার আগে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। এখন সেই একই চিনি ৭০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’

চিনির মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মানিকনগরের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন কিবরিয়া বলেন, ‘রোজায় চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের দাম পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো হচ্ছে। গত বছরও এমনটিই করা হয়েছে।’ বাজারের সিন্ডিকেট এই ধরনের অপকর্ম করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রজমান মাস এলেই ব্যবসায়ীরা কোনও একটি বা দুটি অতি প্রয়োজনীয় পণ্য টার্গেট করে দামে কারসাজি করেন। এ প্রসঙ্গে ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘গত বছরও রোজার আগেই প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রত্যেক রমজানেই সিন্ডিকেট করে কোনও না কোনও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তাদের যেহেতু শাস্তি হয় না, তাই কৌশল বদলে তারা এই ধরনের অপকর্ম করতেই থাকে। তারা সব সময় ওত পেতে থাকে, সুযোগ পেলেই বাজার অস্থির করে তোলে। আগামী রমজানকে কেন্দ্র করে তারা আবারও ভোক্তাদেরকে জিম্মি করতে শুরু করেছে।’

যদিও চিনি ব্যবসায়ীরা সরকারকে জানিয়েছেন বিপুল চিনি মজুত রয়েছে এবং দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু বাজারের চিত্র বলছে, টানা গত দুই মাস ধরে চিনির দাম বাড়ছে। দুই মাসের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, চিনির গুদামজাত পরিস্থিতি ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে তদারকি না করলে রিফাইনারি ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেট তৈরি করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংকট সৃষ্টি এবং অনৈতিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করবেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগেট থেকে চিনির দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় পাইকারিতেও দাম বেড়েছে। আর পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরাতে দাম বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন বলছে, আসন্ন রমজানে চিনির চাহিদা তিন লাখ টন। গেল জানুয়ারি পর্যন্ত বেসরকারি রিফাইনারিগুলো ১০ লাখ ৭৯ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে। ফলে রমজানে চিনিসংকট হওয়ার কথা নয়।

আবার ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, সব মিলিয়ে দেশে চিনির উৎপাদন প্রায় ৩১ লাখ টন। বিপরীতে বাংলাদেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা সাড়ে ১৭ লাখ টন। অর্থাৎ উৎপাদনক্ষমতার ৬০ শতাংশ ব্যবহার করলেই চিনির চাহিদা পূরণ সম্ভব।

তথ্য বলছে, দেশে চাহিদার অর্ধেকের বেশি চিনি সরবরাহ করা হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত সিটি কোম্পানির তীর সুগার মিল এবং সোনারগাঁওয়ের মেঘনাঘাটে অবস্থিত মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ সুগার মিল, ইগলু চিনিসহ ছোট-বড় কয়েকটি সুগার মিল থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিনি সরবরাহ করে তীর ও ফ্রেশ।

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেশি। এ কারণে দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। এছাড়া আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চ কর থাকায় চিনির দাম একটু বাড়তির দিকেই ‘

উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এপ্রিলের ২৩ তারিখের দিক থেকে রোজা শুরু হতে পারে।

এদিকে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার যাতে অস্থির হতে না পারে সেজন্য কৌশল নির্ধারণ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ জন্য বাজার মনিটরিংসহ চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদমর্যদার কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পূর্বগঠিত বাজার মনিটরিং কমিটিগুলোকে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত কর্মকর্তারা যারা বদলি হয়ে গেছেন তাদের বাদ দিয়ে নতুন কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মনিটরিং কমিটিগুলোয় অন্তর্ভুক্ত করতে অন্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছেও কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।