রাস্তাও অঘোষিত টার্মিনাল, চলছে চাঁদাবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় নামমাত্র বাস টার্মিনাল রয়েছে তিনটি। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, গুলিস্তান ও ফুলবাড়িয়া স্টপওভার বাস টার্মিনাল। যদিও এসব টার্মিনালে নেই ন্যুনতম সুযোগ সুবিধা। তবুও বছরের পর বছর ধরে এসব স্থান বাস টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ডিএসসিসি নিজস্বভাবে এসব টার্মিনাল থেকে রাজস্ব আদায় করতো।

কিন্তু সম্প্রতি এসব টার্মিনাল ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসসিসি। তবে ডিএসসিসির এ সিদ্ধান্তে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সমগ্র এলাকা। অর্থাৎ এবারই প্রথমবারের মতো ডিএসসিসির সব রাস্তা অঘোষিত টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। আর এসব রাস্তায় কোনো বাস/মিনিবাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশা ও ট্রাক চলাচল করলেই দিতে হবে টোল। আর এ টোল আদায়ের নামে গণহারে চলছে চাঁদাবাজির উৎসব। এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী মালিক ও চালকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় ১৩ বছর ধরে ডিএসসিসি এলাকায় ওই তিনটি বাস টার্মিনাল থেকে রাজস্ব আদায় করতো করপোরেশনের পরিবহন বিভাগ। কিন্তু এতো বছর এসব টার্মিনাল থেকে কাঙ্খিত টোল বা ইজারার অর্থ আদায় করতে পারেনি ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ। তাই ২০২০ সালে ডিএসসিসির নির্বাচনে মেয়র হিসেবে শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচিত হলে এসব টার্মিনাল নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মেয়র শেখ তাপস দায়িত্ব গ্রহণের পর গত অক্টোবরে এ তিনটি টার্মিনাল ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করেন।

দরপত্রে অংশ নিয়ে গত ১১ নভেম্বর গুলিস্তান-স্টপওভার টার্মিনালটি ইজারা পায় গুলশান চাকা লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি টার্মিনাল ফি ও কুলিমজুরি খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে ২ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকায় টার্মিনালটি ইজারা পায়। কিন্তু গুলিস্তান এলাকা ইজারা হিসেবে পেলেও ইজারাদার প্রতিষ্ঠানটিকে- মতিঝিল, কমলাপুর, জুরাইন, কদমতলী, পোস্তাগোলা, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, কোনাপাড়া, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, মাতুয়াইল, মেরাদিয়া, নন্দীপাড়া, মাদারটেক ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকেও টোল আদায়ের অনুমতি দিয়েছে ডিএসসিসি। এ জন্য এসব এলাকায় কোনো বাস ও মিনিবাস প্রবেশ করলেই ৬০ টাকা করে টোল আদায় করছে ইজারাদার। সেই সঙ্গে সিএনজি, অটোরিকশা, টেম্পু এবং ট্রাক থেকেও টোল আদায় করছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও নিয়ম অনুযায়ী এসব এলাকা কোনো টার্মিনাল হিসেবে অন্তভুর্ক্ত নয়। তবুও পরিবহন মালিকরা টোল পরিশোধে বাধ্য হচ্ছেন ইজারাদারদের চাপে।

কারণ এসব এলাকায় চলাচলকারী সব ধরনের পরিবহন থেকে টোল আদায়ে সাব-ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মূল ইজারাদার ঢাকা চাকার লিমিটেডের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে ইজারা পাওয়ার পর মূল ইজাদার ঢাকা চাকার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব মাসুদ আবার এলাকাভিত্তিক সাব-ইজারাদার নিয়োগ দিয়েছেন মোটা অংকের টাকা নিয়ে। আর এ কারণেই এলাকা ভিত্তিক সাব-ইজারাদাররা আপসে টোল আদায় করতে না পারলে চাপ প্রয়োগ, এমনকি মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা চাকা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব মাসুদ বলেন, এ সব এলাকা থেকে আমরা আমাদের নিজস্ব লোক দিয়ে টোল আদায় করি ডিএসসিসির দেওয়া নিয়মানুযায়ী। তবে যারা বলছে সাব ইজারা দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা। আমিও এমনটা শুনেছি। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিএসসিসিকে চিঠি দিয়েছি।

এদিকে, টার্মিনাল ইজারার কারণে শধুমাত্র পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে টোল আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও মার্কেটের মালামাল আনা নেওয়ার ক্ষেত্রেও টোল আদায় করছে ইজারাদাররা। মার্কেট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- যদি কোনো ব্যবসায়ী কুলি খাটিয়ে মালামাল আনা নেওয়া করে শুধুমাত্র তখন কুলির মজুরি বাবদ টোল আদায় করার কথা। কিন্তু কোনো ব্যবসাযী যদি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মালামাল আনা নেওয়া করে তাতেও কুলি না নিলেও টোল দিতে হচ্ছে।