মীর কাসেম আলী : আসমিপক্ষের যুক্তি শেষ, রাষ্ট্রপক্ষের শুরু

ঢাকা: যুদ্ধাপরাধে প্রমাণিত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের ওপর আসামিপক্ষের প্রাথমিক যুক্তি উপস্থাপন শেষে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে।

বুধবার পঞ্চম দিনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারক এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে।

বেঞ্চের অপর চার সদস্য হলেন- বিচারক সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারক হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারক মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারক মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আশা করছেন, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ মামলার শুনানি শেষ হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে মীর কাসেমের আপিলের ওপর ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানি শুরু হয়। এটি আপিল আদালতে আসা যুদ্ধাপরাধের সপ্তম মামলা, যার ওপর শুনানি চলছে।

বুধবার আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন এস এম শাহজাহান। মীর কাসেমের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের পর বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুহম্মদ বশির আহমেদ।

সকাল ৯টা থেকে দুই ঘণ্টা শুনানির পর মাহবুবে আলম নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আসামিপক্ষ প্রাথমিক বক্তব্য শেষ করেছে। ২৩ তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব। তারপর উনারা হয়তো প্রতিউত্তর দেবেন আইনগত বিষয়ের ওপর। আমি আশা করি ২৩ বা ২৪ তারিখের ভেতরে মামলার শুনানিটা শেষ হয়ে যাবে। এরপর আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে রায়ের জন্য।”

আদালত থেকে বেরিয়ে খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল ১০ অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছিল। দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

“আমরা দেখিয়েছি, ওই মামলায় প্রথমত কাসেম আলীর সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নাই।… আমরা আরও দেখিয়েছি, সাক্ষীরা অবাস্তব ও শেখানো বক্তব্য দিয়েছে। তাদের জেরায় প্রকাশ পেয়েছে সঠিক কথা বলছে না।”

সব কিছু বিবেচনা করে আপিল বিভাগ মীর কাসেম আলীকে খালাস দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন আসামির আইনজীবী।

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “মীর কাসেম আলী ওই সময় ইসলামী ছাত্র সংঘের সম্পাদক থেকেও নিষ্কলুষ, কোনো অপরাধ করেননি- এটা দাবি করার কোনো সুযোগ নাই।”

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে হত্যায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাসেমের ফাঁসির রায় আসে।

একটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা দলের ট্রেনিং ক্যাম্পে মীর কাশেম আলী
ছবি: একটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা দলের ট্রেনিং ক্যাম্পে মীর কাশেম আলী (সূত্র: ইন্টারনেট)

 

১৯৭৭ সালে জামায়াতের বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আহজারুল ইসলাম, কাদের মোলা, মীর কাশেম আলী, আবু তাহেরের নেতৃত্বে ঢাকার ইডেন হোটেলে ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম পরিবর্তন করে ছাত্রশিবির নামে আবির্ভূত হয়। ছাত্রশিবিরের প্রথম কমিটির সভাপতি ছিলেন মীর কাশেম আলী।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে বড় এনজিওটির নাম রাবিতা ইসলামী যার পরিচালক কুখ্যাত আলবদর মীর কাশেম আলী।