রাজাকার নিজামীর প্রাণদন্ডই একমাত্র সাজা: আপিল রায়

 

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা:একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদন্ড পাওয়া জামাতের আমির রাজাকার মতিউর রহমান নিজামীর সাজা কমাতে আসামিপক্ষ নানা যুক্তি দিলেও সর্বোচ্চ আদালত রায়ে বলেছে, অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাণদন্ডই হতে পারে তার একমাত্র সাজা। একাত্তরের খুনে আল বদর বাহিনীর প্রধানের মৃত্যুদন্ড বহালের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই মন্তব্য এসেছে প্রধান বিচারক এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ থেকে।

গত ৬ জানুয়ারি আপিল বিভাগ এই রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেয়। ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় লিখেছেন এ বেঞ্চের সদস্য বিচারক নাজমুন আরা সুলতানা। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারক সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারক হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ফৌজদারি অপরাধে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড। তিন অপরাধে এই শাস্তি পেয়েছেন জামাতের এই শীর্ষ নেতা, যিনি একাত্তরে বহু অপরাধের হোতা আল বদর বাহিনী সংগঠিত ও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

রায়ে বলা হয়, অপরাধের মাত্রা অনুসারে যথাযথ সাজা দেয়া আদালতের একান্ত দায়িত্ব। সাযুজ্যহীন কম সাজা কেবল ভিক্টিমের অনায্যতার সৃষ্টি করে না, বরং কখনো কখনো পুরো সমাজের প্রতিও করে। গণহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং অন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের সবগুলোই ভয়ঙ্করভাবেই নিষ্ঠুর। এই ধরনের বর্বর, নিষ্ঠুর অপরাধে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতায়ও কেবল মৃত্যুদন্ডে ন্যায়বিচার হতে পারে।

“মৃত্যুদন্ড কমানোর মতো কোনো সুযোগ এ মামলায় নেই, বরং বাড়ানোর পরিস্থিতি রয়েছে,” বলা হয় রায়ে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজামী সারা দেশ ঘুরে ঘুরে আল বদর বাহিনী সংগঠিত করেন এবং বিভিন্ন বক্তব্যে তাদের পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগিতার আহ্বান জানান বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া একাত্তরের মধ্য নভেম্বরে প্রকাশিত নিজামীর একটি প্রবন্ধের কথা বিশেষভাবে উঠে এসেছে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে।

ওই লেখাকে উদ্বৃত করে রায়ে বলা হয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানের কিছু বিশ্বাসঘাতক ভারতের পক্ষ হয়ে পাকিস্তানকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে পাকিস্তানের আদর্শ ও অস্তিত্বকে রক্ষা করতে হবে।

সেই সময় পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের সহযোগী আল বাদর বাহিনীর বিভিন্ন অপরাধের কথা তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, এই সব নারকীয়তা সম্পর্কে সেই সময়ে ‘অত্যন্ত সক্রিয়’ রাজনৈতিক নেতা নিজামী পূর্ণ জ্ঞাত ছিলেন।

রায়ে বলা হয়, আল বদর বাহিনীতে কর্তৃত্ব থাকার পরও তিনি তাদের নিবৃত্ত না করে উৎসাহ দিয়েছেন, পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করার আহ্বান করেছেন। আর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে এটা মীমাংসিত বিষয় যে, অধীনস্তদের জন্য ঊর্ধ্বতন দায়ী থাকে।

“এটা ভালোভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪ শ’ বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যায় পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগিতা করেছেন এবং নিজে ব্যক্তিগতভাবে অংশ নিয়েছেন।”

মুক্তিযোদ্ধা বদি, রুমী, জুয়েল ও আসাদকে নিপীড়ন ও হত্যায় নিজামী যুক্ত ছিলেন উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, আল বদর বাহিনীকে বুদ্ধিজীবী হত্যার নির্দেশও তিনি দিয়েছিলেন।

নিয়ম অনুযায়ী আসামিপক্ষ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবে। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দন্ড কার্যকর করা যাবে না। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দন্ডিতদের মধ্যে এ নিয়ে মোট ছয়জনের আপিলের নিষ্পত্তি শেষে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়ে রিভিউয়ের পর্যায়ে এলো।