রাজধানীতে ফিরছে মানুষ: ঈদের পরও ফিরতে ভোগান্তি

ঢাকা: পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদুল আযহা উদ্যাপনে নগরী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া মানুষগুলো আবারও রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন। বাস, ট্রেন, লঞ্চে যে যেভাবে পারছেন ফিরছেন তারা। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ায় গত মঙ্গলবার থেকেই ফেরার এ যাত্রা শুরু হয়েছে। ফলে যানবাহনে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জনজট। বাস লঞ্চে ভিড়ের পাশাপাশি ট্রেনেও হয়েছে শিডিউল বিপর্যয়। বরিশাল নৌবন্দরে রাজধানীমুখী যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ভিড় আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিএ’র মতে, আগামী ১৬ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকামুখী মানুষের চাপ থাকবে বরিশাল নৌবন্দরে। এরমধ্যে ১৭ আগস্ট ভিড় সবচেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত বুধবার ছিল ঈদের তৃতীয় দিন। রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছিল ঈদের আগের সেই দৃশ্য। হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছেন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ট্রেনের দেখা নেই। ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা আন্তঃনগর ধুমকেতু এক্সপ্রেস। পরে ঢাকা থেকে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর ছেড়ে যায়। একই অবস্থা ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসেরও। কমলাপুর থেকে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরা নিয়ে নানা ভোগান্তি ছিল। শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ট্রেন পরের দিনও ছেড়ে গেছে। কিন্তু ঈদের আগের সেই শিডিউল বিপর্যয় পরেও থাকবে এমনটি মানতে পারছেন না যাত্রীরা। ঈদের সময় মানুষের বাড়ি যাওয়ার তাড়া থাকে। আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ঢাকা ছাড়ে মানুষ। এ কারণে ঈদের সময় সাধারণত শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়, ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। তাই অনেকে আছেন সেই ভোগান্তি থেকে বাঁচতে ঈদের পরে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঈদের তৃতীয় দিন তারাই এসেছেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। কিন্তু ঈদের পরও সেই পুরোনো দৃশ্য ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়।

কমলাপুর স্টেশনের এসিও জানায়, গতকাল কমলাপুর স্টেশন থেকে ৩৪টি আন্তঃনগর ও তিনটি স্পেশাল ট্রেন ছেড়ে গেছে। তবে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলগামী দু-একটি ট্রেন বাদে অধিকাংশ ট্রেনই শিডিউল অনুযায়ী ছেড়ে গেছে। গতকালও দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। তবে ভিড় থাকলেও যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে কারো কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
ঈদুল আজহার তিন দিনের ছুটি কাটিয়ে নগরবাসীর অনেকেই গ্রামে থেকে ফিরলেও এখনো ঢাকায় বিরাজ করছে পবিত্র ঈদের ছুটির আমেজ। আগের দুই দিনের মতো গতকাল নগরীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। অধিকাংশ মার্কেট ও বিপণিবিতান ছিল বন্ধ। যানবাহনের সংখ্যাও কম। গতকাল থেকে সরকারি অফিস-আদালত খুললেও তেমন উপস্থিতি ছিল না। সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যাও ছিল একেবারেই শূন্যের কোঠায়।

অন্যদিকে, রাজধানীমুখী লঞ্চগুলোতে বাড়ছে যাত্রীদের ভিড়। গত দু’দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার বরিশাল নৌবন্দরে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। একারণে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। দিবা-সার্ভিসের তিনটি নৌযান ছাড়াও রাতে বরিশাল নদীবন্দর থেকে যাত্রী নিয়ে সরাসরি রুটের ১০টি লঞ্চ ঘাট ত্যাগ করবে। এছাড়া, ভায়া রুটের বেশ কয়েকটি লঞ্চ বরিশাল নৌবন্দর হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার কথা রয়েছে। সরকারি একটি যাত্রীবাহী নৌযানও বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক (টিআই) কবির হোসেন বলেন, কোরবানির ঈদের পরের দিন থেকেই যাত্রীদের রাজধানীতে ফেরত যাওয়া শুরু হয়। গত ক’দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। একারণে চাপ তুলনামূলক কম ছিল। এছাড়া, বৃহস্পতিবার ১৫ আগস্টের ছুটি, এরপর শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। সে হিসাবে শনিবার (১৭ আগস্ট) যাত্রীদের চাপ সবচেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে, কেবিনের হিসাবে ১৬ থেকে ১৮ আগস্ট তিন দিনই চাপ থাকবে। এ ক’দিন লঞ্চের সংখ্যাও বেশি থাকবে বরিশাল নৌবন্দরে।
বরিশাল নৌবন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, আমরা কোনো লঞ্চেই ওভারলোড হয়ে ছাড়তে দিচ্ছি না। লঞ্চ ছাড়ার আগে চেক করে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে, লোডলাইন দেখে নিচ্ছি।

এদিকে, যাত্রীদের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌবন্দরের ভেতরও ও বাইরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। র‌্যাব-৮, মেট্রোপলিটন পুলিশ, ডিবি, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, মেরিন ক্যাডেট ও স্কাউট সদস্যরা নিরাপত্তার কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, যেসব যাত্রী লঞ্চে উঠতে পারবেন না, তাদের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে যাত্রীছাউনির ব্যবস্থা রয়েছে। আর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নৌবন্দর এলাকায় তাদের কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা করছেন।