রডের বদলে বাঁশ: প্রধান আসামি ঠিকাদার মনি সিং গ্রেফতার

রডের বদলে বাঁশ

নিউজ নাইন২৪, ঢাকা: চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় উদ্ভিদ সঙ্গ নিরোধ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি ঠিকাদার মনি সিংকে ঢাকায় গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে দুদক’র নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যরা তাকে ঢাকার পল্লবী থেকে যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মনি সিং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জয় ইন্টারন্যাশনালের সত্বাধীকারী। তার কার্যালয় হচ্ছে ঢাকার ফার্মগেট মনিপুরীপাড়ায়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুষ্টিয়ার একটি টিম ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। এরপর তাকে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করা হয়েছে বলে দুদক কুষ্টিয়ার উপপরিচারক আব্দুল গাফফার জানিয়েছেন।

রডের বদলে বাঁশ মনি সিং
মামলার প্রধান আসামী মেসার্স জয় ইন্টারন্যাশনালের সত্বাধীকারী মনি সিং

এর আগে গত সোমবার (১১ এপ্রিল’১৬) দুপুরে ঢাকা থেকে আগত কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহমুদুল হক পাটোয়ারীর নেতৃত্বে পরিদর্শণকারী দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যুলেয়শন অফিসার মেরিনা জেবুন্নাহার বাদী হয়ে সংশিলষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জয় ইন্টারন্যাশনালের প্রোপাইটার মনি সিং (৬৪/এ মনিপুরী পাড়া তেজগাঁও ঢাকা), ইঞ্জিনিয়ার্স কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের (ইসিএল) ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মুহম্মদ আবদুস সাত্তার (৮৭০ শেওড়া পাড়া মিরপুর ঢাকা) এবং প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ আয়ুব হোসেন (ফ্লাট-২/৫২ তেজকুনিপাড়া তেজগাঁও ঢাকা) এই তিন জনের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৩। তারিখ ১১ এপ্রি ‘১৬।

মামলায় বলা হয়েছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশে ফাইটোসেনেটারী ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের অধীনে উদ্ভিদ সঙ্গ নিরোধ কেন্দ্র, স্থলবন্দর, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা অফিস ভবন নির্মাণ কল্পে গত ১২/০৭/২০১৫ ইং তারিখে ঠিকাদার নির্বাচনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সমূহের দরপত্র মূল্যায়ন করে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মেসার্স জয় ইন্টারন্যাশনাল ৬৪/এ মনিপুরী পাড়া তেজগাঁও ঢাকা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। প্রকল্প পরিচালকের স্মারক নং-ফাইটো-৪১/২০১৫ (অংশ)/৭৮৪ তারিখ ২৫/১০/২০১৫ মোতাবেক মেসার্স জয় ইন্টারন্যাশনালকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

অভিযোগে আরো বলা হয়, কাজের চুক্তিমূল্য ধার্য হয় ২ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ২২৭ টাকা ২২ পয়সা। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত মতে চুক্তি সম্পাদনের দিন থেকে ১২ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা। এ নির্মাণ কাজের ডিজাইন, স্থাপত্য নকশা, কাঠামোগত ডিজাইন তৈরি ও নির্মাণ চলাকালীন সকল প্রকার কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স কনসোর্টিয়াম লি: (ইসিএল) ৮৭০ শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ নিয়মপদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগ প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের সকল প্রকার ক্রয় কার্যক্রমে প্রকল্প পরিচালককে সহায়তা করার জন্য আয়ুব হোসেনকে ওই প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া কৃষি সম্প্রারণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইংয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও আইসিটি ব্যবস্থাপনা শাখার পক্ষ থেকে নির্মাণ কাজটি দেখাশুনার জন্য উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বর্ণিত নির্মাণ কাজটি গত ০৫/১১/২০১৫ ইং তারিখে শুরু হয়ে অদ্যাবধি চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যেই নির্মাণ কাজের মূল ভবনসহ ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেও মামলার অভিযোগে বলা হয়।

মামলায় বলা হয়, এ অবস্থায় বিগত ৬/০৪/২০১৬ ইং তারিখে নির্মাণাধীণ ভবনের সম্মুখ অংশে লুবার নির্মাণকালে অনুমোদিত ডিজাইন উপেক্ষা করে অনুমোদিত রডের পরিবর্তে বাঁশের কাবারি ও ইটের খোয়র বদলে নিন্মমানের সুরকি ব্যবহার করা হয়।

সূত্র বলছে, রডের পরিবর্তে বাঁশের কাবারি ও ইটের খোয়র বদলে নিন্মমানের সুরকি ব্যবহারের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে যা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। পরে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায় প্রমাণ পায় যে, ওই ভবন নির্মাণ কাজের সাঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের একক বা সম্মিলিত যোগসাজসে এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। এতে আরও প্রমাণিত হয় যে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইসিএল এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জয় ইন্টারন্যাশনাল প্রকল্পের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করেছে। কাজের গুণগত মান তদারকি করার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। যার ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়।

প্রসঙ্গত, দুর্নীতি ও অনিয়নের ঘটনার পর্যায়ক্রমে সর্বশেষ গত শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ১১টায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্ত দল দর্শনায় আসে। এ সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রমাণ পেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে ওই ৫ সদস্যের কমিটি তদন্ত করেছেন। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি কোন মন্তব্য করেননি বলে একটি সূত্র থেকে জানা যায়।
পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা হয়। মামলাটি দুদক হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে দুদক মামলটি তদন্ত করছে।