যে কারণে হাইড্রোজেন বোমা এতো ভয়াবহ

উত্তর কোরিয়া তাদের প্রথম হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে। ২০০৬ সালে দেশটি প্রথম পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ করার পর ২০০৯ ও ২০১৩ সালেও এই বোমা পরীক্ষা করে। তবে এই পারমাণবিক বোমার চেয়ে হাইড্রোজেন বোমার বিধ্বংসী ক্ষমতা অনেক বেশি।
বুধবার উত্তর কোরিয়া যে হাইড্রোজেন বোমাটির পরীক্ষা চালিয়েছে তাতে ওই এলাকায় ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে চীনের ভূতাত্ত্বিকরা। এর দ্বারাই বোঝা যায় কতটা বিধ্বংসী হতে পারে হাইড্রোজেন বোমা।
১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করে। এই বোমার ক্ষমতা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা বোমার চেয়েও ছিলো বহুগুণ বেশি। তবে হাইড্রোজেন বোমার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে ইচ্ছেমত এর বিধ্বংসী ক্ষমতা বাড়ানো যায়। এমন একটি বোমা পুরো একটি মেগাসিটিকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমাটি ৩০ অক্টোবর, ১৯৬১ সালে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই বিস্ফোরণে ৫৬ মেগাটন টিএনটির সমান শক্তি নির্গত হয়েছিল। বিস্ফোরণে সৃষ্ট মাশরুম আকৃতির মেঘটি ১৬০ কি.মি. দূর থেকেও দেখা যায়। এই বোমাটি ছিল একটি তিন স্তরবিশিষ্ট হাইড্রোজেন বোমা। এখন পর্যন্ত এধরনের মাত্র ২টি বোমা তৈরি করা হয়েছে।
হাইড্রোজেন বোমা পরমাণুর ফিউশন পদ্ধতিতে কাজ করে। এই পদ্ধতিতে উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপে হাইড্রোজেনের পরমাণু পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হিলিয়াম পরমাণু তৈরি করে। আর এর ফলেই তৈরি হয় প্রবল বিস্ফোরক শক্তি। পুরো প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন কাজ করে তাই এর নাম হাইড্রোজেন বোমা। অন্যদিকে ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়ামের পরমাণু ভেঙ্গে অপেক্ষাকৃত অল্প ভরের দুইটি পরমাণুতে বিভাজ্য হয়ে ফিশন প্রক্রিয়া কাজ করে।
হাইড্রোজেন বোমায় ফিউশন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য লক্ষ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। এই তাপমাত্রা সৃষ্টি করতে তাই প্রথমে একটি পারমাণবিক বোমার সাহায্য নেয়া হয়। এই উচ্চ তাপেই ফিউশন শুরু হয়ে যায়। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটে খুব অল্প সময়ে।