সাশ্রয়ী-পরিবেশবান্ধব ‘আদর্শ চুলা’ আবিষ্কার মোসাদ্দেকের

মোসাদ্দেকের আবিস্কৃত আদর্শ চুলা

নিউজ নাইন ২৪, দিনাজপুর: উদ্ভিদ নিধন ও পরিবেশ দূষণ কমিয়ে জ্বালানি সাশ্রয় এবং স্বল্প খরচে রান্নার চুলা উদ্ভাবন করেছে দিনাজপুরের মোসাদ্দেক।

এ চুলার বহুবিধ সুবিধা সম্বলিত থাকায় এটাকে আদর্শ চুলাও বলা হচ্ছে। এ চুলায় রান্নার কাজে খড়ি, কয়লা বা গ্যাস সব ধরনের জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। মোসাদ্দেক দিনাজপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

এছাড়াও স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিকায়ন করতে সোলার সিস্টেম, অডিও প্লেয়ার, গরমে বাতাস পেতে পাখা, রিমোট কন্ট্রোল সংযোগ করার ব্যবস্থা থাকছে।

দিনাজপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মোসাদ্দেক হোসেনের এ উদ্ভাবিত বিশেষ ধরনের রান্নার চুলা জাতীয় পর্যায়ে ইতোমধ্যে পুরস্কৃত হয়েছে।

মোসাদ্দেক জানান, চুলা শুধুমাত্র রান্না করার জন্য হলে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকার জ্বালানি খরচে ৫ সদস্য পরিবারে পুরো মাসের রান্না করা যায়। চুলাটির সাশ্রয়ীর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি জানান, চুলাটিতে বাইরে থেকে ৬ থেকে ১২ ভোল্টের মোটর দ্বারা বাতাস প্রদান করে আগুন জ্বালাতে সহায়ক অক্সিজেন সরবরাহ করার কারণে জ্বালানি খুব সহজে পোড়ে এবং অপচয় রোধ হয়। চুলাটি স্পাত নির্মিত হওয়ায় তাপধারণ ক্ষমতা বেশি।  এছাড়া চুলাটিতে জ্বালানি পোড়ানোর পরে যে তাপ নির্গত করে তা চুলাটির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকার কারণে অতিরিক্ত তাপ বাইরে নির্গত হয় না ফলে দ্রুত রান্না হয়।

মোসাদ্দেক জানান, ১ কেজি চালের ভাত রান্নায় তার উদ্ভাবিত এ চুলায় ১৮ থেকে ২০ মিনিট সময় ব্যয় হয়। যেখানে সাধারণ চুলায় তা ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগে। অতিরিক্ত বাতাস প্রদানের কারণে রান্নায় কালো ধোঁয়া ও কালি কম হয়। কাঠখড়ি, গোবর খড়ি, বাঁশের খড়ি ও চারকলসহ সব ধরনের জ্বালানি পোড়ানো যায়। এছাড়াও এই  চুলাটিতে ফেলে দেয়া কাঠকয়লাও পোড়ানো যায়। কালো ধোঁয়া ও কোনো প্রকার কালি ছাড়াই পরিবেশবান্ধব উপায়ে কাঠ-কয়লা পুড়িয়ে রান্না করা যায় এবং কাঠকয়লা সহজলভ্য হওয়ায় মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ টাকার কয়লায় একমাস রান্না করা যায়।

এছাড়াও একই চুলা দ্বারা জ্বালানির পাশাপাশি গ্যাসসংযোগ স্থাপন করে বোতলজাত গ্যাস দ্বারাও রান্না করা সম্ভব। চুলাটিতে অক্সিজেন সরবরাহে মোটর চালাতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এডাপটর, মোবাইল চার্জার বা টর্চলাইট ব্যাটারির স্বল্প ভোল্টেজে চালানো যায়। চুলাটি বিভিন্ন ধরণের স্পাত, ৬ থেকে ১২ ভোল্টের মোটর, অক্সিজেন সরবরাহের ব্লুয়ার, কন্ট্রোল সুইচবোর্ড দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি এবং তৈরিতে খরচ হয় মাত্র ২৫০০ টাকা।

এছাড়া রান্নার সময় বাতাস পেতে এবং গান শুনতে বা মোবাইল চার্জ দিতে পারবেন এ স্বয়ক্রিয় চুলায়। তবে স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিকায়ন করতে সোলার সিস্টেম, মিউজিক প্লেয়ার, গরমে বাতাস পেতে পাখা, রিমোট কন্ট্রেল সংযোগ করা সম্ভব। এসব সুবিধা নিতে খরচ সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা চুলাতে খরচ হয়।

মোসাদ্দেক তার উদ্ভাবিত বিশেষ ধরনের চুলাটি গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৬তম জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় সিনিয়র ক্যাটাগরিতে দিনাজপুর জেলা পর্যায়ে চাম্পিয়ন পুরস্কার অর্জন করেছেন। এরপরে ১০ মে ২০১৫ রংপুর বিভাগীয় বিজ্ঞান মেলায় চ্যাম্পিয়ন ও জুলাই ২০১৫ মাসে ঢাকায় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদু ঘরে জাতীয় পর্যায়ে পঞ্চম স্থান অর্জন করেন।

এ ব্যাপারে দিনাজপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ খালেকুজ্জামান জানান, তার উদ্ভাবিত সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব চুলাটি কলেজ মাঠেও রান্না করে দেখেছি। এজন্য মোসাদ্দেক আঞ্চলিক, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করেছে।