মিয়ানমারে ওষুধ রফতানীর সম্ভাবনা

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: আয়তন বাংলাদেশের চারগুণ। জনসংখ্যা মাত্র ৬ কোটি। পাহাড়-পর্বতের এই দেশটিতে নতুন করে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় বেশ পিছিয়ে মিয়ানমার। চাহিদার বেশ বড় অংশই পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। বাংলাদেশি ঔষধ রফতানীর অন্যতম বাজার হতে পারে এ দেশটি। সরকার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিলে রফতানীর পরিমাণ অনেক বাড়বে বলে আশা করছেন ব্যবসায়িরা।

বাংলাদেশ থেকে বছরে একশ কোটি টাকার ঔষধ রফতানী হয় মিয়ানমারে। শহর ছাড়িয়ে দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বাড়ছে এসব ঔষধের চাহিদা। ইয়াঙ্গুনের ব্যস্ত সড়কের পাশে মাঝে মাঝেই দেখা যায় ঔষধের দোকানে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মত। বিক্রিত ঔষধের বড় অংশেরই উৎপাদক বাংলাদেশি কোম্পানি। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক বছর আগে আমদানি হতো সরকারিভাবে। মান বিবেচনায় বাংলাদেশি ঔষধ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন স্থানীয় চিকিৎসকরাও। মিয়ানমারে বাংলাদেশের ঔষধ ব্যবসায়ী রাকিব নাজির বলেন, এখন আমরা লাইফ সেভিং ড্রাগস ম্যানুফেকচারড করছি মিয়ানমারে। এই তথ্যগুলো গণমাধ্যম এবং গনমানুষের কাছে নাই। এই তথ্যগুলো মুষ্ঠিমেয় কয়েকজনই জানেন।

মিয়ানমারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী সৈয়দ শামিম হোসেন বলেন, যত তারাতারি আমরা এখানে নতুন ধরনের ঔষধ রফতানী করতে পারব তত দ্রুত আমরা এখানকার বাজার ধরতে পারব। ভিসা ব্যবস্থা সহজ হলে অনেকেই চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ইন্টারন্যাশনাল স্কয়ার গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী বলেছে, আফ্রিকা, ইথিওপিয়া, কেনিয়া এবং উগান্ডা থেকে পেশেন্ট আসছে আমাদের দেশে চিকিৎসার জন্য। ক্রিটিক্যাল ব্রেনটিউমার সার্জারী হচ্ছে এখন স্কয়ার হসপিটালে। কাজেই আমার মনে হয় মিয়ানমার থেকেও পেশেন্ট আসতে পারে বাংলাদেশে। মিয়ানমার যদি হয় আমাদের জন্য ইকো ট্যুরিজম, মেডিক্যাল ট্যুরিজম হতে পারে মিয়ানমার টু বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন মনে করেন, সরকারি নীতি সহায়তা ও সুযোগ-সুবিধাগুলো জোরদার করা হলে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই হাজার কোটি ডলারের (প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা) ওষুধ রপ্তানি সম্ভব।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে এক হাজার ৬০৮ কোটি ৪০ লাখ (১৬ দশমিক ০৮ বিলিয়ন) ডলার। এর মধ্যে ৩ কোটি ৭৯ লাখ ডলার (প্রায় ৩০০ কোটি টাকা) এসেছে ওষুধ রপ্তানি থেকে।

এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। ২০০৯-১০ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাংলাদেশ ওই অর্থ আয় করেছিল ওষুধ রপ্তানি থেকে। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি করে মোট আয় হয়েছিল ৭ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

এই মুনাফা আরও বাড়াতে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো বিনিয়োগও বাড়িয়েছে। চলতি বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ওষুধ শিল্পে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) গত নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, এর ফলে বাংলাদেশ আরও ১৭ বছর মেধাস্বত্বের জন্য কোনো ব্যয় না করেই ওষুধ তৈরি ও কেনা-বেচা করতে পারবে। ক্যান্সার, আর্থ্রাটিস, অ্যাজমাসহ অনেক জটিল রোগের ওষুধও  দেশের মানুষ কম মূল্যে পাবে।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতা আব্দুল মুকতাদির বলছেন, যে ইনজেকশনের দাম বিদেশে ৩ লাখ টাকা, এলডিসির জন্য দেওয়া সুবিধায় বাংলাদেশের একটি কোম্পানি তা ৬০ হাজার টাকায় দিতে পারে। এই সুযোগ ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে বিদেশ থেকেও রোগীরা বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসবেন; ‘মেডিকেল ট্যুরিজম’ বাড়বে।

বাংলাদেশের ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজার ১২ হাজার কোটি টাকার। এক লাখেরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ মনে করেন, সামনে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের জন্য আরও সুদিন অপেক্ষা করছে।

ওষুধ খাত নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা আশা করছি, আগামী ৭/৮ বছরের মধ্যে ওষুধ রপ্তানি বেড়ে ১০ গুণ হবে। নিজের ধারণার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, আগে সবাই চীন থেকে ওষুধ কিনতো। এখন চীন নিজেদের দেশের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত। তাই সবার ওষুধ কিনছে ভারত থেকে। সম্ভাবনার বিচারে এরপর বাংলাদেশের নামই আসে।

বাংলাদেশের মতো এতো অল্প পয়সায় ওষুধ খাওয়ানোর মত দেশ আর কোথাও নাই। এ খাত থেকে তৈরি পোশাকের চেয়েও বেশি মুনাফা করা সম্ভব বলে মনে করেন হারুনুর রশিদ।#