মার্কেটে ক্রেতা কম, জমজমাট ফুটপাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর মার্কেটগুলোতে ঈদের বেচাকেনা এখনো জমে ওঠেনি। দোকানিরা বলছেন, ঈদের আগে মার্কেটগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা যেমন থাকার কথা তা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের হাতে টাকাও কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ কেনাকাটা করছেন না বললেই চলে। তবে, মূল দোকানগুলোর চাইতে ফুটপাতে বেচাকেনা বেশি হচ্ছে।

শুক্রবার (২৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় নিউ সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটে ক্রেতা সাধারণের ভিড় খুব কম। দোকানিরা দোকান ভরা মালামাল তুলে বসে আছেন ক্রেতার অপেক্ষায়। তবে, সন্ধ্যার দিকে মার্কেটে কিছুটা ক্রেতা বেড়েছে। অন্যদিকে, ভিন্ন চিত্র ফুটপাতে, সেখানে জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা।

ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) ভবনের দ্বিতীয় তলায় জাহানারা এন্টারপ্রাইজের দোকানি মনোয়ার হোসেন বলেন, ছোট থেকে বড় সবধরনের পাঞ্জাবি আর শার্ট বিক্রি হয় এ দোকানে। তবে, ঈদের আগে মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা যেমন থাকার কথা তা নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের হাতে টাকাও কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ কেনাকাটা করছেন না বললেই চলে।

তিনি আরও বলেন, নিউমার্কেটের ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে ফেলায় অনেকের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক এসে রাস্তার ওপাড় থেকে কেনাকাটা করে চলে যান। এখন বেশিরভাগ মানুষই ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করেন। এছাড়া ফুটওভার ব্রিজ থাকতে মানুষজন সরাসরি মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় চলে আসতে পারতেন। এখন আর সেই সুযোগ নেই। তাই কষ্ট করে ওই পাশ থেকে এসে কেউ কেনাকাটা করতে চান না। গত কয়েকদিনে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়েছে।

মার্কেটটির তৃতীয় তলায়ও একই চিত্র। গত ঈদুল ফিতরের আগে মার্কেটটিতে আগুন গেলে অনেক দোকান পুড়ে যায়। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর মার্কেটটির তৃতীয় তলায় দোকানগুলো নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। অধিকাংশ দোকান চালু হলেও এখনো অনেক দোকান প্রস্তুত করার কাজ চলছে।

ক্রেতারা বলছেন, জরুরি প্রয়োজন অনুযায়ী কেনাকাটা করতে হচ্ছে। সবকিছুর দামও আগের চেয়ে অনেক বেশি।

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠছে ফুটপাতের কেনাকাটা। বিপণি বিতানগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে ভিড়। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে ক্রেতাদের আনাগোনা। তবে আগের তুলনায় এবার ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন নিউমার্কেটের দোকানিরা।

নিউ সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় প্যান্ট বিক্রেতা মোস্তাকিম বলেন, ঈদের মধ্যেও বেচাকেনা কম। ক্রেতা তেমন নেই। আগে ব্রিজটা থাকায় ক্রেতা বেশি আসতো। এখন মানুষ ফুটপাত থেকেই কিনে চলে যায়। এছাড়া ভেতরে অনেক গরম। কিছু ক্রেতা আসে তবে আগের মতো না।’

মোহন নামের এক দোকানি বলেন, বেচাকেনা কম। আগে ঈদের সময় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিনে বিক্রি হতো। আর এখন দিনে মাত্র ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা বিক্রি হয়।

প্যান্ট ক্লাবের দোকানি শাকিব বলেন, ঈদের আগে দোকানের কাজ করে মালামাল তুলেছি। ঈদের প্রস্তুতি নিয়েই চালু করেছি। কিন্তু ক্রেতা দেখা মিলছে না।

এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে সবক্ষেত্রে। ঈদকে সামনে রেখে পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম আগেই বেড়েছে।

বিক্রেতারা জানান, প্রতিটি কাপড় ও পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত খরচ বেড়েছে। মার্কেটে এসে সেটা আরও বেড়ে যায়। ফলে সবকিছুর দাম বেড়েছে।

জানা যায়, সাধারণত নিউ মার্কেটে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায় প্যান্ট, ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় পাঞ্জাবি, শার্ট ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায়, বাচ্চাদের কাপড় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য ছাড়াও জুতা, ব্যাগসহ ছেলে-মেয়েদের সব পণ্যের দামই আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর চকবাজার থেকে ছেলের জন্য প্যান্ট কিনতে আসা ওমর ফারুক বলেন, ছেলের জন্য প্যান্ট কিনতে এসেছি। কয়েকটা দোকানে দাম করেছি। দাম বেশি মনে হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুর থেকে আসা ক্রেতা তামজিদ বলেন, প্যান্ট কিনতে এলাম। কতগুলো দোকানে ঘুরে একটা প্যান্ট কিনেছি। সব দোকানেই দাম বেশি চেয়েছে। অথচ কিনেছি তার অর্ধেক টাকা দিয়ে। আগের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে।

ধানমন্ডি থেকে ছেলেকে নিয়ে আসা শামসুন্নাহার বলেন, সবসময়ই নিউমার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসি। গত ঈদের চেয়ে সবকিছুর দামই বেশি।

এদিকে, ঈদের আগে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ক্রেতা বাড়তে পারে বলে ধারণা কোনো কোনো দোকানির। আলী ফ্যাশনের সাইদ বলেন, ক্রেতা কম, সব পণ্যের দামও বেড়েছে। তারপরও শেষ দিকে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করি।

নিউ মার্কেটের ভেতরে ক্রেতা কম হলেও ফুটপাতের দোকানগুলোতে দুপুরের পর থেকেই ক্রেতার উপস্থিতি বেশ ভালোই দেখা গেছে। সন্ধ্যা নাগাদ ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়তে দেখা যায়।