মাদ্রাসার চেয়ে বড় জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র এলিট সোসাইটি

ঢাকা: মশাদের মধ্যে ভয়ংকর মশা হচ্ছে ডেঙ্গু, যার প্রজনন হয় পরিস্কার ও স্বচ্ছ পানিতে। তেমনি সন্ত্রাসবাদের বিস্তার শুধু মাদ্রাসা ঘিরেই হচ্ছে না, বরং তারচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি উৎপাদন হচ্ছে সমাজের উচ্চবিত্ত বা এলিট সোসাইটির মধ্যে। গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় তা আবারো পরিস্কার হলো।

গুলশানের রেস্তোরাঁর যে পাঁচ হামলাকারীর ছবি তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএসের বরাত দিয়ে সাইট ইন্টেলিজেন্স প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে চারজনের পরিচয় জেনে অনেকেই বিস্মিত। তারা সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। প্রত্যেকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। বেশ কিছুদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল তারা। আসুন তাদের পরিচয় জেনে নেই-

চার হামলাকারীর একজন রোহান ইমতিয়াজ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-মহাসচিব এস এম ইমতিয়াজ খানের ছেলে। সে গত জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিল। রোহান ইমতিয়াজ ঢাকার স্কলাসটিকা স্কুলের সাবেক ছাত্র।

 আরেক হামলাকারী নিবরাস ইসলাম নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। তার তিন চাচার মধ্যে একজন সরকারের উপ-সচিব, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, আরেকজন গবেষক।

মীর সামেহ মুবাশ্বেরের বাবা মীর হায়াত কবির অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তা। মা খালেদা পারভীন সরকারি কলেজের শিক্ষক। বড় ভাই পড়ছেন কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে। মুবাশ্বের ‘এ লেভেল’ পরীক্ষার আগে গত মার্চে নিখোঁজ হন বলে থানায় জিডি করা হয়েছিল।

আরেকজন হলো খাইরুল। তার বাড়ি বগুড়ায়। গণমাধ্যমে ছবি দেখেই বাবা-মা ও প্রতিবেশিরা খায়রুলকে চিনতে পারেন। পুলিশ খায়রুলের মা-বাবাকে আটক করেছে। তবে তার ঢাকার বন্ধুরা তাকে তাসিন রওনক নামে চেনে। সেও ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত।

আইএসের প্রকাশ করা ছবিতে পাচঁজনের মধ্যে একজনের পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চার হামলাকারীর যে পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে, তা ঠিক আছে। আমরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

এদিকে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই জঙ্গি তত্পইরতায় নড়ে চড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। তারা বিস্মিত হচ্ছেন। বাংলাদেশে হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, হিযবুত তাহরির ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের জঙ্গি সংগঠনগুলোর ধারাবাহিক উত্থান ঘটেছে। এর মধ্যে হিযবুত তাহরির বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যেই প্রধানত সক্রিয়।

প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকও এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। হিযবুত তাহরিরের প্রধান অধ্যাপক মহিউদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-র শিক্ষক। তিনি ২০১০ সালে একবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে এখন পলাতক আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘আধুনিক এই তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা দুঃখজনক। তবে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আশেপাশের পরিবেশ এবং হয়ত পরিবারও এর জন্য দায়ী। তাদেরকে নানা কৌশলে জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়। আর উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তির কারণেও তারা এ সবে জড়িয়ে পড়ছে। এর মাধ্যমে তারা জঙ্গিদের সংস্পর্শে আসছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকও এই জঙ্গি মোটিভেশন কাজে জড়িত বলে অভিয়োগ আছে।’

প্রসঙ্গত, গুলশান হামলার ঘটনায় ৬ জঙ্গি ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ জন নিহত হয়েছে। তবে পুলিশ নিহতদের মধ্যে একজনের নাম ‘আকাশ’ বলে জঙ্গি হিসেবে সংবাদ মাধ্যমে ছবি পাঠিয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে জঙ্গি নয়। সে আর্টিজান রেস্টুরেন্টের শেফ সাইফুল তালুকদার। রেস্টুরেন্টের মালিক সাদাত মেহেদি তা নিশ্চিত করেছেন।

তথ্য সূত্র: ডয়চে ভেলে