মাছে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশালে ৭ বছরের জেল

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘মৎস্য ও মৎস্য পণ্য (পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২০ এর খাসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। খসড়ায় রফতানি বা অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে মৎস্য বা মৎস্যপণ্য বাজারজাত করলে শাস্তি অনধিক ৭ বছরের জেল বা পাঁচ লাখ টাকা জারিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে।

সোমবার গণভবনে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুমোদিত আইনের খসড়া অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি রফতানি বা অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে মৎস্য বা মৎস্যপণ্য বাজারজাত করলে শাস্তি অনধিক সাত বছর, কিন্তু পাঁচ বছরের নিচে নয়, কারাদ- বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। এর আগে এক্ষেত্রে শাস্তি ছিল ছয় মাস পর্যন্ত কারাদ- বা পাঁচ হাজার টাকা জারিমানা বা উভয় দ-।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের রফতানি বাজার ধরে রাখা এবং নতুন বাজারে অনুপ্রবেশ, মানসস্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি-রফতানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাতকরণের জন্য এ সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশটিকে প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন ও রহিতক্রমে বাংলা ভাষায় আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ১৯ মার্চ ‘মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৯ এর খাসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। এরপর লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ কর্তৃক আইনটির ভেটিং কার্যক্রম শেষ করে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপিত হলে চূড়ান্ত অনুমোদ দেয়া হয়।

আইনের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে
>> আইনটি ৯টি অধ্যায়ে মোট ৫০টি ধারা আছে। ধারা ২ এ প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োগযোগ্য বিবেচনায় ‘অপদ্রব্য’, অনাপত্তি’, আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’, কন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’, কায়ালিটি অ্যাসুরেন্স ম্যানেজার’, ট্রসিবিলিটি’, পরিদর্শক’, পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা’, মিথ্যা সনদ বা দলিল’, স্বাস্থ্য সনদ, স্থাপনা’ এর নতুন সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
>> মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের মান নির্ধারণের এখতিয়ার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। সরকার মান পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনে পরীক্ষাগার স্থাপন করতে পারবে।

>> আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে তিনটি স্তরে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ যথা, কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অধিক্ষেত্র সমগ্র বাংলাদেশ এবং তিনি আঞ্চলিক ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করতে পারবেন।
>> লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত কোনো ব্যক্তি মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রফতানি, কারখানা বা স্থাপনা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্সে উল্লিখিত শর্ত ভঙ্গসহ অসত্য তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন, একাধারে তিন বছর লাইসেন্স নবায়নে ব্যর্থতা, লাইসেন্স হস্তান্তর বা বিক্রয় ইত্যাদি কারণে লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

>> পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক পরিদর্শনকালে কারখানা বা স্থাপনার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় না রাখা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে মানের ব্যত্যয় হলে অপরাধীর বিরদ্ধে অনধিক পাঁচ লাখ টাকা প্রশাসনিক জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া কারখানা বা স্থাপনার মালিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে কারখানা বা স্থাপনার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং স্যানিটারি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবেন মর্মে বিধানাবলী বর্ণিত আছে।
>> মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট হতে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ করতে হবে।
>> বিদ্যমান অধ্যাদেশে বর্ণিত অপরাধের শাস্তি হিসাবে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদ- বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ- নির্ধারণ করা আছে। প্রস্তাবিত আইনে কোনো ব্যক্তি রফতানি বা অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে মৎস বা মৎস্যপণ্য বাজারজাত করলে তার শাস্তি অনধিক সাত বছর, কিন্তু পাঁচ বছরের নিচে নয় কারাদ- বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ- নির্ধারণ করা হয়েছে।

>> আইনের ধারা ৩৩ অনুযায়ী পঁচা বা দূষিত মাছ বিক্রি করলে অনধিক ৫০ হাজার টাকা প্রশাসনিক জরিমানার বিধান আছে।
>> এ আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের বিচার প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা স্টেশন ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তফসিলভুক্ত করে মোবাইল কোর্ট কর্তৃক বিচারের বিধান রাখা হয়েছে।
>> অধিদফতরের কর্মকর্তাদের আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা সরকারের নিকট প্রশাসনিক আপিল করতে পারবেন। এছাড়া আইন কার্যকরণে সরকার বিধি প্রণয়ন করতে পারবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, প্রস্তাবিত আইন কার্যকর হলে রফতানি বাজার ধরে রাখা এবং নতুন বাজারে অনুপ্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা যাবে।