মসজিদে জামায়াত ও মুসল্লী সীমিত করার শরীয়তবিরোধী বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে ধর্মমন্ত্রীকে আইনী নোটিশ

‘ইসলামিক স্টাডিজ’ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় লিগ্যাল নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মসজিদে জামাত ও মুসল্লি সীমিত করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিকে নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন ও দেশের সব আলেমদের ঐকমত্যের দাবিকে ভুল দাবি করে ধর্মমন্ত্রীকে আইনী নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর মুহম্মদপুর তাজ জামে মসজিদের খতীব মুফতিয়ে আযম আল্লামা মুহম্মদ আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ সাহেবের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট শেখ ওমর শরীফ এই নোটিশটি রোববার প্রেরণ করেছেন।

নোটিশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে মসজিদে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরাসহ অনধিক ৫ জন ছাড়া অন্য সব মুসল্লিরা নিজ নিজ বাসায় নামাজ আদায় করবে ও জুমুয়ার জামাতে অনধিক ১০ জন ছাড়া অন্যরা ঘরে জোহরের নামাজ পড়বেন- এই নির্দেশনাকে খন্ডন করে বলা হয়েছে, জামায়াতের, বিশেষত জুমুয়ার নামাজের হুকুম কী হবে? কেননা জুমুয়ার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক সুস্থ সাবালক পুরুষের ওপর ব্যক্তিগতভাবে ফরজ/ওয়াজিব।

আরও বলা হয়েছে, যে মহল্লায়/পাড়ায় জামে মসজিদ আছে এবং কোনো করোনা রোগী নেই কিংবা সন্দেহভাজন লোকও নেই- সেসব এলাকার সুস্থ সাবালক পুরুষদের জুমুয়ার নামাজের বাধ্যবাধকতা পরিত্যাগ করার মতো কোনো শরয়ী “ওজর” নেই, সুতরাং তারা জুমুয়ার নামাজ আদায় করতে হবে।

নোটিশে বলা হয়, বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সকল মত ও পথের ওলামাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে আপনি মসজিদে জামায়াত সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, দেশের অনেক আলেমগণ আপনাদের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্ধ ব্যক্তিকেও জামায়াত পরিত্যাগ করার অনুমতি দেননি। পবিত্র হাদীস শরীফে এসেছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “আমার প্রাণ যাঁর হাতে, তার শপথ করে বলছি, আমার ইচ্ছা হয় আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দিই, আর নামাজের আজান দেওয়ার জন্য হুকুম দিই। তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করি, যেন সে লোকদের নামাজের ইমামতি করে। আর আমি ওই সব লোকদের দিকে যাই, যারা নামাজের জামায়াতে হাজির হয়নি এবং তাদের বাড়িঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিই।” [সহীহ বুখারী শরীফ: ৬৪৪]

মসজিদে গিয়ে পবিত্র জুমুয়ার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক সুস্থ সাবালক পুরুষের ওপর ব্যক্তিগতভাবে বাধ্যতামূলক; তবে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য জুমুয়ার নামাজ বাধ্যতামূলক নয়। পবিত্র ইসলামী শরীয়াতে অসুস্থ ব্যক্তিকে মসজিদে না আসার সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু কিছু ব্যক্তির অসুস্থতার কারণে বাকি সব সুস্থ মুসলিমের জুমুয়ার নামাজ পরিত্যাগ করার কোনো সুযোগ পবিত্র শরীয়াতে নেই।
সাংবিধানিকভাবে যেহেতু বাংলাদেশের রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম, সুতরাং ইসলামী আক্বীদাসমূহ রাষ্ট্র দ্বারা সুরক্ষিত। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মুসলিমদের নিজ দ্বীন পালনের অধিকারও রয়েছে। অথচ এ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার পালনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

এই নোটিশ পাওয়ার ৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে মসজিদে জামায়াত সীমিতকরণ সংক্রান্ত উক্ত সিদ্ধান্তসমূহ প্রত্যাহার করে নিতে ধর্মমন্ত্রীর নিকট দাবি করা হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে জানানো হয়।