ভুট্টা অবিক্রিত থাকায় বিপাকে চাষীরা

ভাঙা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত দিনাজপুরের ভুট্টা চাষি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বিভিন্ন এলাকার চাষীরা ভুট্টা চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। লকডাউনের প্রভাবে পাইকার না আসায় তারা ভুট্টা বিক্রি করতে পারছেন না। তাই ভুট্টা নেয়ার কোনো লোক নেই। গ্রামাঞ্চল থেকে যেসব ফড়িয়া ভুট্টা কিনে মহাজনের ঘরে দিতেন, তারাও এখন ভুট্টা কিনছেন না।

তারা বলছেন, গাড়ি চলাচল বন্ধ। এক জায়গা থেকে ভুট্টা কিনে অন্য জায়গায় নেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া মহাজনেরা ভুট্টা নিয়ে মুরগির খাদ্য ও মাছের খাদ্য তৈরির যেসব মিলে বিক্রি করবে সেগুলো এখন বন্ধ। ফলে এখন ভুট্টা কিনছে না তারা।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার চরপাড়া গ্রামের কৃষক সুজন গতবার ধানের দাম কম পাওয়ায় এবার তিনি ৯ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। এই ভুট্টা বিক্রি করে দিনমজুরদের টাকা দেবেন। এছাড়া পরবর্তী আবাদের জন্য সার কিনবেন তিনি। সার-ঔষধের দোকানে পুরানো বাকি আছে, সেসব পরিশোধ করবেন। কিন্তু ভুট্টা বিক্রি করতে পারছেন না।

সুজন শেখ বলেন, ভুট্টা বিক্রি করে দোকানের বাকি পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া পরবর্তী ফসল সবজি চাষ ও পাট চাষের জন্য জমি তৈরি করতে হবে। এই ভুট্টা বিক্রি করেই ধান কাটার মজুরি দিতে হবে। কিন্তু ভুট্টা কেনার বেপারী নেই। দু-একজন মজুত করার জন্য যারা কিনছেন, তারা দাম বলে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা মন। এ দামে ভুট্টা বিক্রি করলে আমাদের ক্ষতি হবে।
একই উপজেলার উল্লাপাড়া গ্রামের হেলাল খাঁ বলেন, এবার ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে বিপদে পড়েছি। লকডাউনের এক সপ্তাহ আগে ভুট্টার দাম ছিল ৮০০ টাকা মন। এখন তার অর্ধেকের কম দাম বলে বেপারীরা। এছাড়া মজুত করার জন্য দু-চারজন যারা ভুট্টা কিনে চাতালে শুকাতে যাচ্ছেন পুলিশ তাদের বাঁধা দিচ্ছে। এভাবে উত্তরাঞ্চলের চাষীরা ভুট্টা বিক্রি না করতে পেরে পরবর্তী ফসলে হাত দিতে পারছে না। কৃষকরা এখন বেকার বসে আছেন।

তিনি বলেন, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) ভুট্টা চাষ করতে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ পড়ে। সাধারণত এক বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ মন ভুট্টা হয়।

বগুড়ার ভুট্টা ব্যবসায়ী আকবর বলেন, প্রতি বছর ভুট্টার মৌসুমে আমরা হাজার হাজার মন ভুট্টা ক্রয় করি। ভুট্টা কিনে যেসব মিলে মুরগির খাবার, মাছের খাবার ও পশুখাদ্য তৈার করে সেখান পাঠাই। এবার তাদের কোনো অর্ডার নেই। ফোন করেছিলাম কয়েকজনের কাছে। তারা বলছেন, মিল আপাতত বন্ধ। খুললে আমরা ভুট্টার অর্ডার দেব। তখন সরবরাহ করবেন।
তিনি আরও বলেন, ভুট্টা বিক্রি না করতে পেরে কৃষকরা খুব কষ্টে আছে। তারা এক ফসল বিক্রি করে আরেক ফসল আবাদ করেন। তবে এটা শুধু বগুড়া জেলার ঘটনা নয়। গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, নিলফামারি, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী সব জেলায় একই অবস্থা। আমরা ভুট্টা কেনার জন্য কোথাও যাচ্ছি না।

উত্তরাঞ্চলের ভুট্টা চাষীদের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ও কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড. শামসুল আলম বলেন, ভুট্টা, ধান, গম যে ফসলই হোক, কৃষক যেন সে ফসল বিক্রি করতে পারে এ জন্য বাজার কার্যক্রম যতটা সম্ভব অব্যাহত রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, বৈশ্বিক কৃষিপণ্য উৎপাদন, ফলন ও আবাদের ওপর সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইএসডিএ)। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে বাংলাদেশে ভুট্টা উৎপাদন ও ফলনে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশে ভুট্টার উৎপাদন ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে ধানের পরই দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ আবাদীত শস্য ভুট্টা। ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ মৌসুমে বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ৪০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হতে পারে, যা আগের মৌসুমের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি।