ভিনেগার বা সিরকার সব উপকারিতা জেনে নিন!

সাস্থ ডেস্ক: ভিনেগার অ্যাসিটিক অ্যাসিডের (CH3COOH) ৬-১০% ও পানির মিশ্রণে তৈরি। চিনি বা ইথানলকে গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে পরিণত করা হয়। এটি সাধারণতঃ রান্নাকর্মে ব্যবহৃত হয়। এটি মদ কিংবা আপেলের রস দিয়ে উৎপন্ন এলকোহল, ফলের রস ইত্যাদি জাতীয় তরল পদার্থ সহযোগে ভিনেগার তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। উক্ত তরলে ইথানল দ্রবীভূত হয়ে ভিনেগারে রূপান্তরিত করে। নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করেও এটি প্রস্তুত হয়। রান্নাকর্মে প্রায়শঃই আচার-চাটনী ও সালাদে এটি ব্যবহার করা হয়। ইতালীয় রান্নায় ভিনেগার, তৈল এবং লবণ আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে বিবেচিত। গৃহস্থালী পরিস্কার, পুড়ে যাওয়া, চিকিৎসায় পথ্য ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষেত্রে এর স্বার্থক প্রয়োগ ঘটেছে।

ভিনেগারের উপকারীতা: প্রতিদিন একটু সিরকা বা ভিনেগার এবং এর সঙ্গে খানিকটা পনির—এই খাবার খালি পেটে রক্তের শর্করা ৪ থেকে ৬ শতাংশ কমাতে পারে। কী খেলে ডায়াবেটিস কমে, তা নিয়ে নানা মত আছে। তবে এই দাবির পেছনে গবেষকদের কিছু যুক্তিও আছে। ভিনেগার পাকস্থলী থেকে খাদ্য শোষণকে ধীর করে দেয়, ফলে খাবারের শর্করাটা ধীরে ধীরে রক্তে মেশে। একই সঙ্গে পনির হলো ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস, আর ভিটামিন ডি স্বল্পতা ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। ভাবছেন কীভাবে প্রতিদিন খাবারে সিরকা যোগ করা যায়? ব্যাপারটা খুব সহজ। টেবিলে সালাদ তৈরির সময় একটু সিরকা দিয়ে মাখিয়ে নিন। কখনো খাবার মেরিনেট করতেও সিরকা ব্যবহার করুন। এভাবেই আপনি নিজের শর্করা আরও ভালো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের নানান রান্নায় ভিনেগার ব্যবহৃত হয়। মাংস রান্না, আচার কিংবা সালাদ বানানো ইত্যাদি অনেক কিছুতেই ভিনেগার ব্যবহার করা হয় অহরহ। রান্না ছাড়াও বিভিন্ন গৃহস্থালি কাজে কিংবা কোনো কিছু পরিষ্কার করতেও ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। ভিনেগারের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও আছে । আমাদের দেশে সাধারণত সাদা ভিনেগার বেশি ব্যবহার করা হয়। ১ টেবিল চামচ সাদা ভিনেগারে ০.৯ গ্রাম শর্করা, ০.৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।আসুন জেনে নেয়া যাক ভিনেগারের ৫টি স্বাস্থ্য উপকারীতা।

ওজন কমাতে সহায়ক: নিয়মিত ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া কিছুটা সহজ হয়। যারা ওজন সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা সালাদের সাথে মেয়োনেজের বদলে ভিনেগার দিয়ে খান। তাহলে মেয়োনেজের অতিরিক্ত ক্যালোরি ও ফ্যাট ছাড়াই আপনি সালাদকে সুস্বাদু করতে পারবেন। তাই ওজন কমাতে সালাদ, সবজি কিংবা অন্যান্য খাবারে ভিনেগার যোগ করুন।

ক্লান্তি দূর করা: ভিনেগার খেলে শরীরের রক্ত প্রবাহ সচল থাকে এবং রক্তে অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ে। এ ছাড়াও ভিনেগার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্লান্তি দূর করা এবং শরীরের বিভিন্ন স্বাভাবিক কার্যাবলীকে সচল রাখে। ফলে নিয়মিত ভিনেগার খেলে শরীর চনমনে থাকবে এবং ক্লান্তি ভাব কমে যাবে।

ডায়াবেটিসের জন্য ভালো: কয়েকটি গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে শর্করা জাতীয় খাবারের সাথে ভিনেগার খেলে রক্তে শর্করার প্রবেশ কিছুটা ধীর হয়। ভিনেগার পরিপাকের কিছু এনজাইমকে রোধ করে যেসব এনজাইমের কাজ হলো শ্বেতসারকে শর্করার ক্ষুদ্র কণায় রূপান্তরিত করা। ২ টেবিল চামচ ভিনেগার আধা কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেলে সকালে রক্তে শর্করা প্রায় ৪-৬ শতাংশ কমে।তাই যারা ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করলে উপকার পাবেন।

হজমে সহায়তা করে: অনেকেরই হজমে সমস্যা আছে। কিছু খেলেই হজমে সমস্যা হয় যাদের তাদের জন্য ভিনেগার বেশ উপকারী। ভিনেগার হজমে সহায়তা করে। নিয়মিত সালাদের সাথে ভিনেগার খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ভিনেগার খাবার থেকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শোষণ করতে সহায়তা করে।

অনিদ্রা দূর করে: অনেকেই আছেন যারা রাতে ঘুমানোর সমস্যায় ভুগছেন। রাতে ঘুমাতে যাদের সমস্যা হয় তাঁরা ভিনেগার ব্যবহারে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে গরম পানির সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে সেই পানিতে গোসল করে নিলে শরীরের স্নায়ুর উত্তেজনা কমে আপনার মন শিথিল হবে এবং প্রশান্তি আসবে। ফলে সহজেই ঘুম চলে আসবে এবং গভীর ঘুম হবে।

ভিনেগারের যত ব্যবহার: রান্নাবান্নার পাশাপাশি রূপচর্চা ও বিভিন গৃহস্থালি প্রয়োজনেও ব্যবহার করতে পারেন ভিনেগার। জেনে নিন ভিনেগারের নানান ধরনের ব্যবহার সম্পর্কে-

মেঝে পরিষ্কার করতে: আধা গ্যালন উষ্ণ পানির সঙ্গে আধা কাপ সাদা ভিনেগার মিশিয়ে মেঝে মুছে নিন। পরিষ্কার হয়ে যাবে মেঝে।

ওভেনের দুর্গন্ধ দূর করতে: কাপে তিন ভাগ পানি ও এক ভাগ ভিনেগার মিশিয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করুন খানিকক্ষণ। ওভেনের ভেতরের দুর্গন্ধ চলে যাবে।

কার্পেটের দাগ দূর করতে: কার্পেটের দাগ দূর করতেও ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য ১ চা চামচ লিকুইড ডিটারজেন্ট ও ১ চা চামচ সাদা ভিনেগার একসঙ্গে মেশান। মিশ্রণটি ১ চা চামচ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে নরম কাপড় বা ব্রাশের সাহায্যে দাগের উপর ধীরে ধীরে ঘষুন। পরিষ্কার পানিতে ভেজানো একটি তোয়ালে দিয়ে জায়গাটি মুছে নিন সঙ্গে সঙ্গে। তারপর হেয়ার ড্রায়ার কিংবা ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিন কার্পেট। তবে তৈলাক্ত দাগ কিংবা অনেকদিনের পুরনো দাগের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি কাজ করবে না।

চুলের কন্ডিশনার হিসাবে: ভিনেগার চমৎকার প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে। শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে ১ চা চামচ ভিনেগার মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিন। ঝলমলে হবে চুল।

দেয়াল থেকে বলপয়েন্টের দাগ তুলতে: বাসায় শিশু থাকলে দেয়ালে আঁকিবুঁকি নিত্য দিনের ঘটনা! দেয়ালে বলপয়েন্টের দাগ লাগলে ভিনেগার নিয়ে দাগের উপর লাগান। তারপর কাপড় কিংবা স্পঞ্জ দিয়ে ঘষুন। দাগ চলে যাবে।

মরিচা দূর করতে: কাঁচি দীর্ঘদিন ব্যবহার না করার ফলে মরিচা পড়ে যায়। সাদা ভিনেগার ভেজানো কাপড় দিয়ে বার কয়েক মুছে নিন কাঁচি। ঝকঝকে হয়ে যাবে। তারপর শুকনা নরম কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।

টিফিন বক্সের দুর্গন্ধ দূর করতে: অনেক সময় প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে এক ধরনের ভ্যাপসা গন্ধ হয়ে যায় লাঞ্চ বা টিফিন বক্সে। এ সমস্যার সমাধানে এক টুকরা পাউরুটি সাদা ভিনেগারে ভিজিয়ে সেটা রাতভর রেখে দিন বক্সে। সকালে উঠে দেখবেন গন্ধ বেমালুম গায়েব!

ফ্রিজ পরিষ্কার রাখতে: সমপরিমাণ পানি ও সাদা ভিনেগার মিশিয়ে ফ্রিজের ভেতর ও বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে পারেন।

রূপার গহনার উজ্জ্বলতা বাড়াতে: শখের রূপা গহনা কালচে হয়ে গেলে পরিষ্কার করতে পারেন ভিনেগার দিয়ে। আধা কাপ সাদা ভিনেগার ও ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা একসঙ্গে মিশিয়ে রূপার গহনা ডুবিয়ে রাখুন ২/৩ ঘন্টা। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে নিন। আগের মতো চাকচিক্য ফিরে আসবে গহনায়।

রূপচর্চায় স্বতন্ত্র ব্যবহার: ভিনেগারের সাধারণ ব্যবহার সম্পর্কে আমরা জানলেও রূপচর্চায় এর ব্যবহার সম্পর্কে হয়তো জানি না। বহুমুখী গুণসম্পন্ন এই ভিনেগার ত্বকে ব্রণ ওঠা প্রতিরোধ করে, নেইল পলিশকে দীর্ঘস্থায়ী করে থাকে। কাজে লাগতে পারে আপনার ফেসিয়ালে, ত্বককে বাঁচায় রোদে পোড়া ক্ষতির হাত থেকে, দূর করে খুসকিও। আসুন জেনে নিই রূপচর্চায় ভিনেগারের এমনই বহুবিধ ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে।

উজ্জ্বলতা রক্ষার্থে: সমস্ত শরীরের উজ্জ্বলতা রক্ষার্থে এই ভিনেগার বেশ কার্যকর। এর জন্য বাথটাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ হালকা গরম পানির ভেতরে প্রায় ৮ ছটাক অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার দিন এবং এর মধ্যে ১৫ মিনিট শরীরটাকে ভিজিয়ে রাখুন। শরীরের ত্বকের বিভিন্ন স্থানের রঙের ভারসাম্য রক্ষার্থে সাহায্য করে থাকে।

চুলের যত্নে: চুলের যত্নে ভিনেগার বেশ উপকারী। এর জন্য এক কাপ পানিতে ২ টেবিলচামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। চুল পরিস্কারের পর এই মিশ্রণটি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলে ব্যবহার করলে তা কন্ডিশনারের কাজ করে। ফলে চুল ঝলমলে আর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে: অনেকের পায়ে বাজে ধরনের দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। এটি ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাসের কারণে হয়ে থাকে। এই দুর্গন্ধ দূর করতেও ভিনেগার অত্যন্ত উপকারী। এর জন্য ৪ কাপ পানিতে এক কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটিতে ১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। এরপরে পা পরিস্কারভাবে ভালো পানিতে ধুয়ে ফেলুন এবং দুর্গন্ধমুক্ত পায়ের অধিকারী হন।