ভাঙছে মেঘনা, বাস্তুচ্যূত শত শত পরিবার

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা: লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী সারা বছর ধরে অব্যাহতভাবে ভেঙেই চলেছে। বছরের সব মৌসুমেই ভাঙে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা। এবারের বর্ষা মৌসুমে ভাঙন পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। হুমকির মুখে রয়েছে বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।

গত একমাসে ভাঙনে কমলনগরের লুধূয়া বাঘার হাট বাজার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বসত বাড়ি হারিয়েছে অন্তত দুই শতাধিক পরিবার। এমন পরিস্থিতিতে রামগতি-কমলনগরের মানুষ অন্য কোনো উন্নয়ন নয়; কেবলই ভাঙন প্রতিরোধে নদী তীর রক্ষা বাঁধ চায়।

মেঘনা উপকূল ঘুরে দেখা যায়, রামগতি ও কমলনগরে বেড়িবাঁধ না থাকায় অরক্ষিত। বর্ষা এলেই এখানে আতঙ্ক বেড়ে যায়। এখন বর্ষা গেলেও আতঙ্ক কাটে না। সারা বছরের ভাঙনে এখানকার মানুষ দিশেহারা। এখানে ভাঙছে নদী, কাঁদছে মানুষ। নদী ভাঙনের শিকার মানুষগুলো দুঃখ কষ্টের শেষ নেই। তারা সব হারিয়ে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অনেকই রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের দু’পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ অন্যের পরিত্যক্ত জমিতে মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন। তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা থেকে রামগতি পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধের মধ্যে প্রায় ৩২ কিলোমিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় অব্যাহত ভাঙনের মুখে রয়েছে কমলনগর উপজেলা চর কালকিনি, সাহেবেরহাট, চর ফলকন, চর লরেন্স ও পাটারিরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা। ভাঙছে রামগতি উপজেলার বালুরচর, বাংলাবাজার, চরগাজী, চর আলগী, সেবাগ্রাম, বড়খেরী, চর রমিজ ও চর আবদুল্লাহ। ভাঙনের মুখে থাকা মাতাব্বর ও নাছির নাছিরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, জোয়ার এলেই পানি উঠে বাজার ডুবে যায়, নদীতে ভেঙে বিলীন হয় দোকানঘর। ভাঙন না ঠেকানো না গেলে তাদের পথে বসতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ভাঙন এতোই বেশি ঘর-বাড়ি সরিয়ে নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে ভাঙতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা বিলীন হয়ে যাবে।

কমলনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজি উল্লাহ জুয়েল বলেন, নদী ভাঙনে তাদের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে। নতুন করে বসতি গড়লেও মেঘনা ধেয়ে আসছে।

রামগতি কমলনগর উপজেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের একটাই দাবি, অন্য কোনো উন্নয়ন নয় ভিটে মাটি রাক্ষায় নদীর ডুব চর ড্রেজিং করে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ চায়। এসব কাজ সেনাবাহিনীকে দিয়ে কার্যকর করার দাবি তাদের।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, বাঁধ নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।