ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন দলে ইসলাম বিদ্বেষ বাড়ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির অর্ধেকের বেশি সদস্যই ইসলামকে ‘ব্রিটিশদের জীবনযাপনের জন্য হুমকিস্বরূপ’ বলে মনে করেন। সম্প্রতি ধর্মীয়-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে কাজ করা ‘হোপ নট হেট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত এক জরিপ থেকে এই তথ্য জানা গেছে। এর মাধ্যমে ব্রিটেনের শাসকদলের মধ্যে ইসলামফোবিয়ার চিত্রই ফুটে উঠেছে।

জরিপে দেখা গেছে, পরিচিত টোরিদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি বিশ্বাস করে যে, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটেনের প্রতি বিদ্বেষকেই প্রতিফলিত করে এবং তাদের প্রতি ১০জনের মধ্যে প্রায় ৬জনই মনে করেন ‘ব্রিটেনের কয়েকটি অঞ্চল শরিয়া আইনের আধিপত্য রয়েছে এবং সেখানে অ-মুসলিমরা প্রবেশ করতে পারে না।’ সাধারণ মানুষের তুলনায় কনজারভেটিভ সমর্থকদের মধ্যে মুসলমানদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব অনেক বেশি। জরিপে তাদের ৩০ শতাংশই বলেছেন যে, তারা মনে করেন মুসলমানরা তাদের জন্য হুমকি।

২০১৯ সালের নির্বাচনে যারা বরিস জনসনকে সমর্থন করেছিলেন তাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশই বিশ্বাস করেন যে, ব্রিটিশ মুসলমানদের ব্যাপক বৈরিতা প্রতিফলিত করে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ। তাদের দুই-তৃতীয়াংশ বিশ্বাস করেন যে, ব্রিটেনে শরিয়া আইন প্রচলিত অঞ্চল রয়েছে। কনজোরভেটিভ পার্টির ১ হাজার ২১৩জন সদস্যকে নিয়ে পরিচালিত ইউগোভের জরিপ অনুসারে, তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই মুসলমানের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। অথচ, হিন্দু, ইহুদি বা শিখদের প্রতি অনুরূপ নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন মাত্র ৩ শতাংশ।

এ বিষয়ে কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান সায়েদা ওয়ারসি বলেন, ‘এই সর্বশেষ জরিপটি আরও প্রমাণ দেয় যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ নিয়ে দলের মধ্যে আসলে গুরুতর সমস্যা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দলের মধ্যে এই মনোভাব ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে না নেয়ার অর্থ, এই ঘৃণ্য দৃষ্টিভঙ্গি আরও তীব্রতর এবং বৃদ্ধি পেতে দেয়া হয়েছে – দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’

ইক্যুয়ালিটি এন্ড হিউম্যান রাইটস কমিশন কনজারভেটিভ পার্টির ইসলামফোবিয়ার বিষয়ে তদন্তের পরিকল্পনা বাদ দেয়ার চার মাসের মধ্যেই এই জরিপের ফল প্রকাশিত হল। যদিও তারা মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেনের (এমসিবির) পক্ষ থেকে টরি কর্মী, কাউন্সিলর এবং রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ইসলামফোবিক মন্তব্য ও কাজের জন্য ৩০০টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছিল। তখন দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অভিযোগগুলো তারা খতিয়ে দেখবে। এ বিষয়ে এমসিবির একজন মুখপাত্র বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে আমরা কনজারভেটিভ পার্টিতে গভীরভাবে ইসলামফোবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠতে দেখেছি এবং তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত হয়েছি। এই জরিপের মাধ্যমে ৩০০ সদস্যের বিরুদ্ধে এমসিবির জমা দেয়া ইসলামফোবিয়ায় অভিযোগ প্রাতিষ্ঠানিক প্রমাণ পেয়েছে।’

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।