ব্যয় জটিলতায় গ্যাস কূপ খনন নিয়ে অনিশ্চয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশীয় গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানী বাপেক্সকে পাশ কাটিয়ে অধিক ব্যায়ে বিদেশী কোম্পানীর মাধ্যমে গ্যাসকূপ খনন করা নিয়ে দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় গ্যাস ক্ষেত্র ভোলার গ্যাস উত্তোলন অনিশ্চয়তায়। সহসাই কাটছেনা এই অনিশ্চয়তা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ২ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। আর নিজস্ব গ্যাস উত্তোলন না করায় আমদানির অজুহাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেনা দেশ। অথচ এই ক্ষেত্রের গ্যাস উত্তোলন শুরু হলে এলএনজি আমদানি কমিয়ে আনা বা বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দেশীয় গ্যাস উত্তোলন কোম্পানী বাপেক্সকে বাদ দিয়ে বিদেশ নির্ভরতাই এসব সমস্যার মূল কারণ। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম ভোলায় খননের জন্য কূপ প্রতি ২১ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটি সংশোধন করতে বললে তারা ২০.৮০ মিলিয়ন ডলারের সর্বশেষ প্রস্তাব প্রদান করে। কিন্তু এই গ্যাজপ্রমই ইতিপূর্বে সেখানে ১৬ মিলিয়ন ডলার করে দুটি কূপ খনন করেছে। তাদের এই নতুন প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে না হওয়ায় পেট্রোবাংলা আর অগ্রসর হতে পারছে না। পেট্রোবাংলার মতে, রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স ১৬ থেকে ১৭ মিলিয়ন ডলারে ভোলায় কূপ খনন করতে রাজি। ফলে গ্যাজপ্রমের প্রস্তাবটি কার্যত আটকে গেছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভোলা গ্যাস ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে ৪ টিসিএফ গ্যাস পাওয়া যাবে। সারা দেশে বর্তমানে যে পরিমান গ্যাস মজুত রয়েছে শুধু ভোলার গ্যাসই হবে তার এক তৃতীয়াংশ। এই গ্যাস ক্ষেত্রই দেশের গ্যাস সংকট সমাধানে বড় সহায়ক হতে পারে।

এদিকে তেল-গ্যাসের সম্ভাবনা ও মজুদের তথ্য সংগ্রহে স্থলভাগের পাশাপাশি সমুদ্র এলাকায়ও জরিপ পরিচালনা এবং কূপ খননের কাজ করতে আগ্রহী রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম। ইতোমধ্যে স্থলভাগ ও সমুদ্রবক্ষে কর্মপরিকল্পনা-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় তারা। প্রস্তাবগুলোর সম্ভাবতা যাচাই করে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

ইতিপূর্বে দ্বীপজেলা ভোলার সব গ্যাসক্ষেত্রসহ সমুদ্র ব্লকগুলোয় কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব দেয় গ্যাজপ্রম। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ভোলা গ্যাসক্ষেত্রে আরো কয়েকটি কূপ খনন, সমুদ্র ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সার্ভে পরিচালনা এবং ছাতক গ্যাসফিল্ডে ড্রিলিং কার্যক্রম ইত্যাদি। রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস কোম্পানি বাপেক্সের সঙ্গে যৌথভাবে এসব কাজ করতে চায় তারা। ভোলায় ৩টি কূপ খনন করতে হবে। ইতোমধ্যেই সেখানে ১ দশমিক ৫ টিসিএফ গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। পুরো এলাকা সার্ভে করা হলে তা ৪ থেকে ৫ টিসিএফ পর্যন্ত পৌছতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে গ্যাজপ্রমের প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করে পেট্রোবাংলা। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) আবদুস সুলতানকে। গ্যাজপ্রম স্থলভাগ ও সমুদ্রসীমায় জরিপ, অনু

সন্ধান ও ড্রিলিংয়ের বিষয়ে যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার বিস্তারিত সম্ভাব্যতা ও যৌক্তিকতা এই কমিটি যাচাই করে দেখছে।

পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, ২০১২ সালে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পর দেশের সমুদ্রবক্ষের তেল-গ্যাস মজুদের তথ্য সংগ্রহে দ্বিমাত্রিক মাল্টিক্লায়েন্ট সাইসমিক সার্ভের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৫ সালে সার্ভের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। চার বছর চলে গেলেও ওই কাজে কোনও অগ্রগতি নেই। অথচ এখন বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে।

সূত্রমতে, ২০১৫ সালের দ্বিমাত্রিক মাল্টিক্লায়েন্ট সাইসমিক সার্ভের দরপত্র অনুযায়ী সাগরে তেল-গ্যাসের তথ্য জানতে পানির ২০ মিটার থেকে আড়াই হাজার মিটার গভীরতা পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালনার কথা ছিল। ১০ বছরের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনাও করা হয়। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব জমা দেয়।

ভোলায় গ্যাস উত্তোলনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ জ্বালনি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অগ্রগতি সম্পর্কে আমি নিজেও কিছু জানিনা। তবে এইটুকু বলতে পারি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি অনুমোদন করলেই কাজ শুরু হবে।