ব্যাংক বিমুখ হচ্ছে আমানতকারীরা

সঙ্কটাপন্ন ব্যাংক খাত। একদিকে আমানত হ্রাসে নগদ টাকার ঘাটতি অন্যদিকে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ডলার সঙ্কট। তার উপর অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা। এ কারণে আস্থাহীনতার কবলে ব্যাংক খাত। এই আস্থাহীনতা ধীরে ধীরে গ্রাহককে ব্যাংক বিমুখ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বেসরকারি সংস্থা সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ব্যাংক খাতে আস্থার সংকট এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে। সব মিলিয়ে আস্থার সংকট আমানতকারীদের ধীরে ধীরে ব্যাংকবিমুখ করছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। তার মতে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন নিজেদের ইচ্ছেমতো চলছে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনও নিয়ম-নীতি মানছে না তারা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ব্যাংক খাত নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। এটি ব্যাংকের জন্য অশনি সংকেত। সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করতে হলে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সেজন্য সঠিক জায়গায় সঠিক লোক বসাতে হবে।
জানা গেছে, গত বছরের শুরুতেও ব্যাংক খাতে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য ছিল। বিনিয়োগ করতে না পারায় ওই সময় ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়ে দেয়। তখন অনেকে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে ব্যাংকের আমানত কমতে থাকে। এরই মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের ঘটনায় আস্থা হারান আমানতকারীরা।এমনকি সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকে রাখা আমানত প্রত্যাহার করতে থাকে। ফলে ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার সংকট হতে দেখা যায়। এই রেশ কাটতে না কাটতেই বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সেনায় অনিয়মের তথ্য। সেটার সঙ্গে যুক্ত হয় রপ্তানির ভুয়া ভাউচারে জনতা ব্যাংক থেকে সরকারের নগদ সহায়তা তহবিলের ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা। ফলে আস্থার সঙ্কট বাড়তেই থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবিবেচনামূলক আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে গত অর্থবছরের দ্বিতায়ার্ধে কিছু তফসিলি ব্যাংকের তারল্য চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এ তারল্য চাপ কমাতে ঋণ আমানতের সর্বোচ্চ সীমা অর্থাৎ এডিআর সাড়ে ৮৩ শতাংশে নামিয়ে আনার সময়সীমা এক বছর বাড়িয়ে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এদিকে, নতুন প্রজম্মের ব্যাংক ফারমার্সের আর্থিক অনিয়মের ফলে ওই ব্যাংকে উদ্ভুত তারল্য সংকট সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতের আমানতকারীদের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছিল। এ অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে স্বস্তিকর অবস্থায় ফিরে আনতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ব্যাংকটিতে নতুন করে মূলধন যোগান দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে ব্যাংকিং খাতের উপর আমানতকারীদের আস্থা ফিরে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।