বীজ সংকটের ফায়দা লুটছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো

সিলেট সংবাদদাতা: হঠাৎ করেই সরকারি বীজের সংকট দেখা দেয়ার এর ফায়দা লুটছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। মূল দামের চেয়ে কয়েকগুন বেশি দামে বাজারে সরবরাহ করছে বীজ। এতে করে বাড়তি দামে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক।

এর মধ্যে, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে সরকারি বীজের সংকট দেখা দেয়ায় প্রায় তিনগুণ বেশি দামে বীজ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে। এখন ধান বপনের সময়, কিন্তু শায়েস্তাগঞ্জে কৃষকের চাহিদামতো ধানের বীজ মিলছে না। আমন ধানের বীজের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, আমন ধানের তিনরকম বীজের চাহিদা বেশি। ৪৯, ১১ ও ৩৪ জাতের বীজে ফলন বেশ ভালো হয়। সরকারি বীজ ১০ কেজির বস্তা ৩শ টাকা করে বিক্রি হয়। কিন্তু সরকারি বীজের সংকট থাকায় কোম্পানিগুলো ৩শ টাকার বস্তা ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সেখানেও আবার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বস্তার গায়ে মূল্য লেখা থাকার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

এরইমধ্যে কিছুদিন আগে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা ও ইউনিয়ন উপ-সহকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন কোম্পানির ২শ বস্তা ধানের বীজ আটক করেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তার সমাধান করা হয়। এদিকে বীজতলা তৈরির সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারিভাবে বীজ সরবরাহের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে আসন্ন আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

প্রতিবছর বীজ উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এ বীজ সরবরাহ করলেও এবার বীজতলা তৈরির মৌসুম চলে গেলেও বীজের সরবরাহ নেই। স্থানীয় ডিলারদের ঘর এখনও ফাঁকা। বীজ না পেয়ে কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। উপজেলার নুরপুর ইউনিয়নের সুরাবই গ্রামের কৃষক নুরুল হুদা বলেন, বীজের জন্য গত ১৫ দিন যাবত ঘুরছি। কোনো ডিলারদের কাছে সরকারি বীজ নেই। এদিকে বীজতলা তৈরির সময় চলে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় চরম উৎকণ্ঠায় আছি।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার উবাহাটা গ্রামের কৃষক মহিবুর রহমান মুরাদ বলেন, বীজের যে সংকট তাতে এবার ধান চাষ করতে পারব কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ৪৯ ধানের সরকারি বীজ বাজারে পাওয়াই যাচ্ছে না। এর সুযোগে বিভিন্ন কোম্পানির বীজের দাম তিনগুণ বেড়ে গেছে।

এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুকান্ত ধর বলেন, কৃষি অফিস বীজ সরবরাহ করে না। বাংলাদেশ বীজ উন্নয়ন কর্পোরেশন বীজ সরবরাহ করে থাকে। আর বীজের মান নিয়ন্ত্রণের দ্বায়িত্বে থাকে বীজ প্রত্যয়ন অফিস। তবে কৃষি অফিস বীজ বাজার মনিটরিং করে।

আমন বীজের দাম চড়া, হতাশ কৃষক:
অন্যদিকে, উপকূলীয় উপজেলা কয়রা সদরসহ সাতটি ইউনিয়নের বিসিআইসি’র ডিলার ও সাব ডিলারের দোকানে রোপা আমনের বীজধান চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক কৃষক বীজ কিনতে পারছেন না। এতে কৃষকেরা চরম হতাশায় ভুগছেন।

উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে- স্থানীয় বাজারের ডিলার ও সাব ডিলাররা সাতশ’ টাকা থেকে সাড়ে সাতশ’ টাকা দামে ১০ কেজি বীজ ধানের প্যাকেট বিক্রি করছেন। অথচ সরকারি বীজের দাম মাত্র ২৯০ টাকা। ১নং কয়রা গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম হাওলাদার বলেন, সরকারি বীজ ধানের তুলনায় কোম্পানির বীজের মূল্য দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।

কৃষকরা জানান, সরকারি বীজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে কোম্পানির বীজের দাম ৭/৮শ’ টাকা কখনো হতে পারে না। ডিলাররা যোগসাজসে দাম বাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কয়রার প্রান্তিক কৃষকরা।