বিনাশুল্কে ফিনিশড টাইলস আমদানি!

Ceramic-Wear
চট্টগ্রাম বন্দরে ৪০ কন্টেইনার টাইলস আটক, কর ফাঁকির অভিযোগ
টাইলস আমদানির ক্ষেত্রে একটি অসাধু চক্র প্রতিবছর কয়েকশ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েক বছর শুল্ক গোয়েন্দারা নিবিড়ভাবে এ খাতের আমদানি করা পণ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করে এ ধরনের একটি অসাধু চক্রের সন্ধান পেয়েছে। তারা বন্ড সুবিধার (বিনাশুল্কে) আওতায় কাঁচামালের নামে প্রায় তৈরি করা পণ্য নিয়ে আসছে। এরপর তা খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরে চীন থেকে আমদানি করা ৪০ কন্টেইনার টাইলস শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ তাদের হেফাজতে নিয়েছে। টাইলসের কাঁচামাল হিসেবে বন্ড সুবিধার আওতায় পণ্যগুলো আনা হয়েছে। ঢাকা বন্ড কমিশনারেটের অধীনে বাংলাদেশ-তাইওয়ান সিরামিক প্রতিষ্ঠানের নামে টাইলসগুলো আমদানি করা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দাদের মতে, পানি শোষণ ক্ষমতা অনুযায়ী আমদানি করা টাইলসগুলোর প্রকারভেদ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সাধারণত শূন্য দশমিক পাঁচ শূন্য শতাংশ পানি শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন টাইলসগুলোকে প্রায় তৈরি পণ্য হিসেবে শ্রেণিবিন্যস্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। বাংলাদেশ-তাইওয়ান সিরামিক প্রতিষ্ঠানের নামে চীন থেকে যে টাইলসগুলো আমদানি করা হয়েছে তা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান শুল্ক গোয়েন্দারা। সেখানে পরীক্ষা করে দেখা যায় টাইলসগুলোর পানি শোষণ ক্ষমতা দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাত্ পণ্যগুলো ফিনিশড প্রোডাক্টের একেবারে কাছাকাছি। এনবিআর -এর পণ্যের এইচএস কোড অনুযায়ী শতকরা শূন্য দশমিক পাঁচ ভাগের নিচে পানি শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন টাইলস কোনভাবেই বন্ডের সুবিধা পেতে পারে না। বন্ড সুবিধায় আনা কাঁচামাল দিয়ে তৈরি করা পণ্য সাধারণত বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ-তাইওয়ান সিরামিক কারখানা টাইলসের কাঁচামাল আমদানি করে পরবর্তীতে ফিনিশড টাইলস মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করে থাকে বলে জানানো হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার পর শুল্ক গোয়েন্দারা ৪০ কন্টেইনার টাইলসের নমুনা সংগ্রহ করে। এতে দেখা যায়, শুধুমাত্র টাইলসের ওপরে পলিশ করা হয়নি। বর্তমানে বাজারে আনপলিশড টাইলসও অহরহ বিক্রি হচ্ছে বলে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিমত। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বাণিজ্যিকভাবে যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একই পণ্য আমদানি করে তাদেরকে সর্বমোট ১৫১ ভাগ শুল্ক দিতে হয়। অথচ কোন কারখানার অধীনে আনা হলে তাতে বন্ড সুবিধার আওতায় তারা শূন্য শুল্ক সুবিধা পায়। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা টাইলস কেজি প্রতি দাম সাধারণত পৌনে ১৩ টাকার কমবেশি হয়। অন্যদিকে আমদানি করা এই ৪০ কন্টেইনারের টাইলসের প্রতি কেজির ঘোষিত মূল্য দেখানো হয়েছে কেজি প্রতি ৭ টাকা ৬৮ পয়সা। সংশ্লিষ্টদের মতে, আধুনিক মেশিনের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি টাইলস পলিশ করতে ৫/৬ টাকা লাগার কথা নয়। সেক্ষেত্রে আমদানি মূল্য কম দেখানো হয়েছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ একটি পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন যত বেশি দেখানো যাবে তাতে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সুবিধাও বৃদ্ধি পাবে। সাধারণত রপ্তানিমুখী পণ্যের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শতকরা ১০ ভাগ মূল্য সংযোজন থাকতে হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্ডের একাধিক কর্মকর্তার মতে, একটি সম্পূর্ণরূপে তৈরি টাইলস শুধুমাত্র পলিশড না থাকার কারণে তা কাঁচামাল হতে পারে না। টাইলস তৈরির জন্য শুধুমাত্র মাটি ও কেমিক্যাল আমদানি করার ক্ষেত্রেই বন্ড সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-তাইওয়ান সিরামিক প্রতিষ্ঠানটি ইতিপূর্বে বন্ড সুবিধায় আনা কাঁচামাল দিয়ে টাইলস তৈরি না করে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার অপরাধে বিশাল অঙ্কের জরিমানা প্রদান করেছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা রানা ইত্তেফাককে বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে যখন জরিমানা করা হয়েছিল তখন সেটি তার মালিকানায় ছিল না। তবে জরিমানার অর্থ তত্কালীন মালিক পরিশোধ করেছেন বলে তিনি জানান। এবারের আমদানি করা টাইলস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কাস্টমসকে আমাদের বক্তব্য চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এটি যে ফিনিশড প্রোডাক্ট নয় তা আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল বাজারে আমার প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করার জন্য শুল্ক গোয়েন্দাদের দিয়ে এ কাজটি করিয়েছে। আশা করছি শেষ বিচারে আমরা সঠিক প্রমাণিত হবো।’

এদিকে শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, কাঁচামালের নামে বন্ড সুবিধার আওতায় আমদানি করা টাইলস পণ্যের চালানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দেশীয় পণ্যগুলো যাতে অসাধু আমদানিকারকদের হাতে মার না খায় সে দিকটি খেয়াল রাখা হচ্ছে।