বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জম্মু-কাশ্মীরের সব রাজনৈতিক দল এক

জম্মু-কাশ্মীরের সব রাজনৈতিক দল এক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল ও অঞ্চলটিকে দুটি কেন্দ্র শাসিত এলাকায় পরিণত করতে এক বছর আগে নেয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধিন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে উপত্যকার প্রধান ছয়টি রাজনৈতিক দল। দীর্ঘদিনের শত্রুতা ভুলে তাদের এই জোটবদ্ধ হওয়াকে স্থানীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন বলে মনে করা হচ্ছে।

ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিপলস ডেমক্রেটিক পার্টি (পিডিপি), জম্মু-কাশ্মীর কংগ্রেস, পিপলস কনফারেন্স, সিপিএম এবং জম্মু-কাশ্মীর আওয়ামি ন্যাশনাল কনফারেন্সের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের সিদ্ধান্ত জম্মু-কাশ্মীর ও নয়া দিল্লীর মধ্যে সম্পর্ক বদলে দিয়েছে।

দলগুলো জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিষয়ক সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের অঙ্গীকার করে বলে দিল্লীর সিদ্ধান্ত ‘আক্রোশপূর্ণ অদূরদর্শিতা’ ও ‘পুরোপুরি অসাংবিধানিক’।

বিবৃতিতে বলা হয় সব পক্ষ ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট নেয়া ‘গুপকার ঘোষণা’ মেনে চলবে। তাতে আঞ্চলিক দলগুলো ও কংগ্রেস জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রক্ষা এবং এটা বিনষ্টের যেকোন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।

শনিবারের এই বিবৃতিতে সই করেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ফারুক আবদুল্লাহ, পিডিপি প্রধান মেহবুবা মুফতি, জম্মু-কাশ্মীর কংগ্রেসের প্রধান জি এ মির, পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজ্জাদ লোন, সিপিএম নেতা এম ওয়াই তারিগামি এবং জম্মু-কাশ্মীর আওয়ামি ন্যাশনাল কনফারেন্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুজাফ্ফর শাহ।

তবে ঐক্যবদ্ধ হলেও কংগ্রেস দ্বিতীয় কিছু ভাবছে বলে মনে হচ্ছে। রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান জি এ মির বলেছে, গত বছর আমাদের প্রতিনিধি গুপকার ঘোষনায় সই করেছিল। এরপর অনেক কিছু বদলে গেছে। আমরা রাজ্যমর্যাদা ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল নিয়ে হতাশায় ভুগছি। এখনই কোন রাজনৈতিক জোট গঠন না করে সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত।

সূত্র জানায়, আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও যৌথ বিবৃতি বেশ গোপনীয়তা রক্ষা করে, বেশ নিখুঁতভাবে দেয়া হয়। গত কয়েক দিন ধরে সব নেতা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন এবং কয়েকজন দেখাও করেন।

এক সিনিয়র নেতা বলেছে, শুক্রবার খসড়াটি তৈরি করে নেতাদের মধ্যে বিলি করা হয়। সব নেতা এটি অনুমোদন করেছে।

সে বলেছে, দিল্লী শাসকরা চাচ্ছে কাশ্মীরে যেন কেউ কিছু করতে না পারে। আমাদের দলীয় রাজনীতি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য হবে সংবিধানের পুনপ্রতিষ্ঠা।

জননিরাপত্তা আইনে এখনো আটক অবস্থায় থাকা মেহবুবা মুফতি এক টুইটে তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ফারুক আব্দুল্লাহর প্রশংসা করেন কাশ্মীরের অধিকার রক্ষায় রাজনৈতিক ঐক্য নিশ্চিত করতে পারার জন্য।

নতুন ব্যবস্থার প্রতি সাজ্জাদ লোনও শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তিনি টুইট করেন: অত্যন্ত সন্তোষজনক দিন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ঐকবদ্ধ ব্যবস্থাই একমাত্র উপায়। এটা ক্ষমতার জন্য নয়। এটা হলো আমাদের ন্যায্য পাওয়া ফিরিয়ে আনার লড়াই। ড. ফারুক সাহেব মেহবুবা জি ও তারিগামি সাহেবকে ধন্যবাদ।

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর কেন্দ্র এখানে বড় ধরনের নিরাপত্তা দমন অভিযান চালায়, গণতান্ত্রিক দাবি করা দেশটিতে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়া ঠেকাতে সাবেক তিন মুখ্যমন্ত্রীসহ হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়।