বিএমডিসি’কে জানায়নি প্রতারক চিকিৎসক গৌতম , অভিযোগের পাহাড়

ঢাকা: কলকাতার প্রজনন বিশেষজ্ঞ এবং গাইনোকোলজিক্যাল এন্ডোস্কোপিক সার্জন পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করা ডা. গৌতম খাস্তগীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন ছাড়াই রোগী দেখছে সে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) সামিউল ইসলাম সাদী বলেন, ‘বিদেশী কোনো চিকিৎসককে দেশে রোগী দেখতে হলে স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে অনুমোদন নিতে হয়’।

‘ডা. গৌতম খাস্তগীরের বাংলাদেশে অনুমোদনের বিষয়ে মেডিকেল-ডেন্টাল কাউন্সিল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে খোঁজ নেয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার এ অবৈধ ব্যবস্থাপনায় রোগী দেখার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে’। এদিকে বিএমডিসি’র নিবন্ধনে ডা. খাস্তগীরের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সোমবার সকালে বিএমডিসি’র নিবন্ধন শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ নামে কলকাতার কোনো চিকিৎসকেরই অনুমোদন নেই। অথচ দেশের যেকোনো স্থানে দেশি ও বিদেশী চিকিৎসকদের রোগী দেখার জন্যে বিএমডিসি’র নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ রয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রথমে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, পরে ঢাকার একটি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার জাল বিছিয়েছে এই প্রতারক চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর।

বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রার ডা. জাহেদুল হক বসুনিয়া আজ বলেন, দু’ভাবে বিদেশী চিকিৎসকদের দেশে রোগী দেখার অনুমোদন দেয়া হয়- দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি। একদিনের জন্যেও যদি কোনো বিদেশী চিকিৎসক রোগী দেখে, তার জন্যে অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে কলকাতার ডা. গৌতম খাস্তগীরের কোনো মেয়াদেরই নিবন্ধন নেই বলে জানান বিএমডিসি’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা বোরহানউদ্দিন। তিনি বলেন, দেশের কোনো মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতালে বা অন্য কোথাও রোগী দেখার জন্যে ডা. গৌতম খাস্তগীর আবেদন করেনি। বিএমডিসি’র প্রশাসনিক শাখার তথ্যমতে, এ ধরনের অপরাধে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে।

সূত্র জানায়, ঢাকার উপকণ্ঠে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক দফা রোগী দেখে চলতি মাসের শেষ দিকেই দ্বিতীয় দফায় আবার রোগী দেখতে আসবে ডা. খাস্তগীর।

প্রথমবারে চিকিৎসা নেয়া ২২ জন রোগীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের এক কথা- ‘ডা. গৌতম খাস্তগীরের রোগী দেখা আর প্রতিশ্রুতির তুবড়ি ফোটানো বাক্যালাপে ভেবেছিলাম, এই বুঝি মা হয়ে গেলাম! চিকিৎসাও নিলাম। পরে দেখলাম, সবই ভুয়া’। ঢাকার ইলেকট্রনিক মিডিয়ার একজন নারীকর্মী জানায়, ‘খবরের কাগজে তাকে নিয়ে লেখালেখি যে, বাংলাদেশে তার বাজার সম্প্রসারণ বা মার্কেটিং কৌশল প্রথমে তা বুঝতে পারিনি’।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘কোথায় ডাক্তারের ফি তিন হাজার টাকা আছে বলুন! বিকাশের মাধ্যমে ওই হাসপাতালকে তিন হাজার টাকা অগ্রিম ফি দিলাম, সিরিয়াল নিলাম। তার চেম্বারে যাওয়ার আগে সহকারীরা আগের চিকিৎসাপত্র দেখলেন। দিলেন এক গাদা টেস্ট। সেগুলোও করালাম। তারপর মাত্র মিনিট তিনেক সেসব কাগজপত্রে চোখ বুলিয়ে তিনি বললেন, বাংলাদেশে হবে না, কলকাতায় আসুন। তারপর ধরিয়ে দিলেন নিজের ভিজিটিং কার্ড।এই হলো চিকিৎসা!’

সন্তান প্রত্যাশী ফজলুল হক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি জানান, এবার জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে তার এক আত্মীয় ওই হাসপাতালে ডা. গৌতম খাস্তগীরকে দেখানোর জন্যে ফোন দেন। বিকাশের মাধ্যমে তার কাছে অগ্রিম ৫ হাজার টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে ডা. গৌতম খাস্তগীরের প্রাথমিক সাক্ষাৎ মিলবে বলে ফোনে জানানো হয়।

প্রিয়তা বালা (ছদ্মনাম) নামে আরেক নারী বলেছে, ‘ডা. গৌতম খাস্তগীরের পরামর্শে কলকাতায় যাই। তার আগে স্বামীর সঙ্গে এখানে-সেখানে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি, খোদ কলকাতার রোগীদেরই তার প্রতি আস্থা নেই। যে কারণে বাংলাদেশী রোগীদের দিকে ঝুঁকছে সে’।

কলকাতার একটি সূত্র জানিয়েছে, সেখানকার একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে ঢাকায় প্রতারণার ঘাঁটি গাড়তে চাইছে ডা. গৌতম খাস্তগীর। নিঃসন্তান দম্পতিদের আবেগকে পুঁজি করেই এখান থেকে কলকাতায় নিজের বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চাইছে সে।

সূত্রের বক্তব্য, চট্টগ্রামের সন্তান হয়েও এদেশের মানুষদের প্রতি তার কোনো কমিটমেন্ট নেই। সে টাকাটাই বেশি চেনে। আর এদেশে তার বাপ-দাদার আবাস ছিলো, সেই সহানুভূতিকে পুঁজি করেই দেশের নি:সন্তান দম্পতিদের কোলে ফুটফুটে সন্তান এনে দেয়ার চিকিৎসার নামে চলছে দেশের মানুষকে নিঃস্ব ও সর্বশান্ত করার পাঁয়তারা।