বিআরআই-কেন্দ্রীক উন্নয়ন বাংলাদেশের জন্য আশামুখী

নিউজ ডেস্ক:ঐতিহাসিকভাবেই চীনের সাথে ভালো সম্পর্ক বাংলাদেশের। এই সম্পর্কের সূচনা ২০০০ বছরেরও আগে এবং এটা তৈরী হয়েছিল মূলত সিল্ক রোডের মধ্য দিয়ে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ পারস্পরিক গভীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জনগণের পর্যায়ে সম্পর্ক রয়েছে সেটা সাম্প্রতিককালে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার এবং সড়ক, হাইওয়ে, রেলওয়ে, বিমানবন্দর এবং বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের মতো বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান সহযোগী। চীনের বিদেশী সহায়তা তহবিলেরও অন্যতম প্রধান গ্রহীতা বাংলাদেশ।

তাছাড়া, বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে এমন একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, যেটাকে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সেতুবন্ধনের স্থান হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই এলাকা চীনের কাছে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে এবং ২০১৬ সাল থেকে এর অধীনে সুফল ভোগ করে আসছে।

এই কারণে দুই দেশের যে কোন একটিকে যে কোন বড় ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচি একে অন্যের উপর প্রভাব ফেলে। চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) ১৩তম অধিবেশনের দ্বিতীয় সেশনে এবং চায়নিজ পিপলস পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্সের (সিপিপিসিসি) ১৩তম ন্যাশনাল কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশনে দুই দেশের এই কৌশলগত সম্পর্কের গুরুত্বের উপর আবারও জোর দেয়া হয়। এই দুই অধিবেশনে চীনের নেতৃবৃন্দ বিআরআইয়ের অধীনে বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেন। এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়ায় সেটা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে।

২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে বাংলাদেশ। এ সময়ের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা। তবে, এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিকে তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রতি বছর ৭.৫-৮ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে (বর্তমানে যেটা হলো ৭ শতাংশ)। আর এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে বিআরআই একটি সময়োপযোগী ও জরুরি অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগবে বাংলাদেশের।

অর্থনীতিবিদদের মত হলো জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশকে আরও বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে, রফতানি ও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে হবে। এগুলোই বর্তমান অর্থনীতির চালিকা শক্তি। এই তিনটি খাতেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বিআরআই।

বিনিয়োগের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে, যেটা আসলে বিআরআইয়েরও গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। রফতানির ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য কারণ পর্যাপ্ত অবকাঠামো ছাড়া রফতানি পণ্যে বৈচিত্র আনা যাবে না এবং নতুন বাজারেও প্রবেশ করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে বিআরআই বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদ। কারণ এমআইসি পর্যায়ে উন্নীত হতে হলে যে কোন দেশকে অবকাঠামো খাতে প্রতি বছর ২৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করতে হবে।

অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে তাদের সেবাদান সিস্টেমেরও উন্নতি করতে হবে এবং এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)। যদিও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শ্লোগানের অধীনে অনেকখানি এগিয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি, কিন্তু চীনের কাছ থেকে আরও বহু কিছু শেখার আছে তাদের, যেহেতু চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

চীন এখন বিআরআইভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে সহযোগিতার ব্যাপারে আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে পূর্ব এশিয়ার এই দেশসহ বিআরআইয়ের অংশীদার দেশগুলোর সাথে অর্থপূর্ণ ও বহুমুখী সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।

এই ইনিশিয়েটিভের আরেকটি উপকার হলো এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজেদের পণ্যের জন্য বিকল্প বাজার অনুসন্ধানের সুযোগ পাবে, কারণ বিআরআই এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আরও বেশি সংযোগ বাড়াবে। বর্তমানে মূলত পশ্চিমা দেশগুলোতেই বাংলাদেশের রফতানি সীমাবদ্ধ।

বিদেশ থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে হলে বাংলাদেশকে উচ্চ দক্ষতাসম্পণ্ন পেশাদার ও কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। বিআরআই সহযোগিতার অধীনে এই সম্ভাবনাটা অনেক বেড়ে যাবে। এটা আরও বেশি বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে চীনে বিশ্বমানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিতে সাহায্য করবে এবং একইসাথে বিআরআই-এর অংশীদার দেশগুলোতে তারা চাকরি খুঁজে পাবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বিআরআই অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা নিয়ে আসতে পারে। এটা দেশ ও দেশের মানুষের সার্বিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে কারণ অর্থনৈতিক উন্নতি স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ উন্নয়নের অন্যান্য সূচকে অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখবে।