কেরালায় বারশ’ বছরের পুরনো মসজিদ

কেরালায় বারশ বছরের পুরনো জুমা মসজিদ

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক: অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক ভারতের কেরালার তাজহাথানগাদি জুমা মসজিদ। বারশ’ বছর আগে নির্মিত ভারতের অন্যতম প্রাচীণ এই মসজিদটি (Thazhathangadi Juma Masjid) কেরালার কোত্তায়াম (Kottayam) জেলায় অবস্থিত।

বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই পবিত্র মসজিদটি দ্বিতীয় হিজরী শতকের ধর্ম প্রচারক সাহাবী হযরত মালেক ইবনে দিনার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু গোড়াপত্তন করেন। সাহাবী হযরত মালেক ইবনে দিনার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আখেরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক মোতাবেক দ্বীন ইসলাম প্রচারে আরব থেকে আসেন এই উপভারত মহাদেশে। উনার নির্মিত এই মসজিদটি ভারতের প্রথম মসজিদ হিসেবে ধরা হয়। বর্তমান কাঠামোয় নির্মিত মসজিদটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। এটা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন। লাল ইট ও নকশাদার কাঠ দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরের কাঠের দেয়ালে খোদাই করে লেখা আছে পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত ও আরবি ক্যালিওগ্রাফি। এর ছাদটি বাঁকানো ও উচুঁতে খোপ খোপ করে বানানো হয়েছে।

তাজহাথানগাদি জুমা মসজিদ
তাজহাথানগাদি জুমা মসজিদের ভেতরের দৃশ্য

সম্প্রতি মসজিদ কর্তৃপক্ষ ১২শ’ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নারীদের একদিনের জন্য এই মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন। আগামী ৮ মে রোববার সেখানকার নারীরা এই সুযোগ পাবেন। ওই দিন তারা কেবল মসজিদের স্থাপত্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তারা এই মসজিদে নামাজ আদায় কিংবা অন্য কোনো ধরনের ধর্মীয় কাজে অংশ নিতে পারবেন না।

ভারতের এক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মৌলভি সিরাজউদ্দীন হাসান বলছিলেন,আমরা নারী ও পুরুষকে একসাথে মসজিদে ঢ়ুকতে দেই না। মসজিদের ভেতর মহিলাদেরকে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে দেওয়া হয় না। মসজিদে পুরুষের ন্যায় তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।

কিন্তু এমন বহু পর্যটক আছেন যারা সারাবিশ্ব থেকেই এই মসজিদটি দেখতে আসেন। প্রাচীন এই মসজিদটির মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন আর তখন আমাদের মহিলারা বলতে থাকেন, তারা কখনো এর সৌন্দর্য দেখতে পেলেন না। তাই তাদের দাবি মেটাতে সপ্তাহে মাত্র দুই দিন তাদেরকে আমরা মসজিদের ভেতর প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি, যাতে তারা ভেতরে আসতে পারে এবং মসজিদের নির্মাণশৈলী দেখতে পারে। সূত্র: এনডিটিভি

তাজহাথানগাদি জুমা মসজিদ
তাজহাথানগাদি জুমা মসজিদের মিম্বার

উল্লেখ্য, হযরত ইমাম মালিক ইবনে দিনার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রখ্যাত সূফী ধর্ম প্রচারক। ত্বরীকত ও তাসাউফের শীর্ষস্থানীয় ইমাম ছিলেন তিনি। কুনুজুল আউলিয়া গ্রন্থকার বর্ণনা করেন, মালিক ইবনে দিনার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু । দীর্ঘ দিন যাবৎ যুদ্ধে অংশ গ্রহণের অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান ছিলেন। পরবর্তীতে যুদ্দের উদ্দেশ্যে মুসলিম সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।

তাজহাথানগাদি জুমা মসজিদ
কেরালায় তাজহাথানগাদি জুমা মসজিদ

প্রখ্যাত সাহাবী হযরত মালেক ইবনে দিনার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আলাইহি উনার কিছু উক্তি-

১. “আপনি দুনিয়া নিয়ে যে পরিমাণ উদ্বেগ করবেন, আপনার অন্তর থেকে আখিরাতের সচেতনতা সেই পরিমাণে দূর হয়ে যাবে। আপনি আখিরাত নিয়ে যে পরিমাণে সচেতন থাকবেন, সে পরিমাণ দুনিয়ার উদ্বেগ আপনার অন্তর থেকে দূর হয়ে যাবে।” — মালিক ইবনে দিনার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

[আয যুহদ– ইবনে আবি আদ-দুনিয়া, ৬৭]

২. “যে ব্যক্তি দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে, তার প্রতি এই দুনিয়া কখনই সন্তুষ্ট হয়নি যতক্ষণ না পর্যন্ত সে মোহরানা হিসেবে দ্বীনকে পরিত্যাগ করেছে।” — মালিক ইবনে দিনার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

[আল বায়হাকি, আল-যুহদ আল-কাবির, পৃ ১০০]

৩. “হে আমার ভাই, খেয়াল রাখো,
তোমার যে ভাই, বন্ধু এবং সঙ্গীর কাছ থেকে তোমার দ্বীনের ব্যাপারে উপকৃত হও না, তার কাছে থেকে পালাও!”

—  মালিক ইবনে দিনার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

[ইবনে ‘আসাকির তারিখ দিমাশক, ৪২১/৫৬]

৪. “মানুষের অন্তরে দুনিয়ার ভালোবাসা প্রবল হলে ওয়াজ-নসীহত কোন ফল দেয় না।”

৫. “কারও নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য এটুকু যথেষ্ট যে, সে নিজে নেককার নয় আবার নেককারদের সমালোচনায় লিপ্ত।”