বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে যেভাবে স্বর্ণ জমা রাখা হয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনা জমা রাখার জন্য অনেকগুলো আইনি প্রক্রিয়া ও ধাপ পার হতে হয়। তারপর সোনা জমা রাখা যায়। শুধু তাই নয়, জমা রাখা সোনা ভল্ট থেকে বের করতে চাইলেও ছয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও আদালতের নির্দেশনা ও আরও ডজন খানেক ধাপ পার হতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের মহাব্যবস্থাপক মোহম্মদ মাছুম পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে এক রতি সোনা বের করার সুযোগ নেই। একইভাবে শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনা রাখতে চাইলেও আদালতের নির্দেশনা মেনে বেশ কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনা রাখতে হলে জব্দ সোনার একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সংস্থার গুদামঘর বা নিজস্ব ভল্টে জমা করা হয়। পরের ধাপে অবৈধ সোনা বাজেয়াপ্ত করার জন্য তালিকা আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালত যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রাখার জন্য বলে, তাহলে পরের ধাপে সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রাখার অনুমতি চেয়ে আদালতের রায়ের কপিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় আবেদন করতে হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থার আবেদন আমলে নিয়ে পরের ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনের জন্য একটি ফাইল পাঠায়। সেই ফাইল অনুমোদন হয়ে ফিরে আসার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সব সোনা নিয়ে আসার জন্য একটি তারিখ দেওয়া হয়। ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকারকে আসতে বলা হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি সোনাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়ে আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত স্বর্ণকার নতুন করে সোনার ওজন করেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে কষ্টিপাথরে সোনার মান যাচাই করা হয়। কি পরিমাণ সোনা আছে তারও পরিমাপ করা হয়। স্বর্ণকার তথ্যগুলো বলতে থাকেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই তথ্যগুলো রেকর্ডবুকে লিখে নেন। এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে সব সোনা একটি পট অথবা কৌটার মধ্যে রাখা হয়। এর পর ওই কৌটার মুখে ছোট একটি তালা লাগানো হয়। এরপর পট বা কৌটাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পর সিলগালা করা হয়। সেই প্যাকেটের ওপর সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগের একজন কর্মকর্তা আড়াআড়িভাবে স্বাক্ষর করেন। এরপর কৌটার বা পটের চারদিক দিয়ে ছোট ছোট পিন গেঁথে দেওয়া হয়। সর্বশেষ ধাপে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে ছয় স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পার করে ভল্টের মধ্যে ঢোকানো হয়। পরে ব্যাংক, কাস্টম হাউসের অথবা এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই সব সোনা মান নির্ধারণপূর্বক ব্যাংক গ্রহণ করে রসিদ দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের মহাব্যবস্থাপক বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা পেলে একই পদ্ধতিতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করার পর সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে অথবা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত ব্যক্তির কাছে সোনা তুলে দেওয়া হয়।’