বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির তদন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে কয়েক কর্মকর্তাকে ঘিরেই

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের ও ফরেক্স রিজার্ভের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঘিরেই ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত। সংঘবদ্ধ একটি চক্র রয়েছে তাদের সঙ্গে। সন্দেহভাজনরা একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্র-ছায়ায় থাকায় তাদের নাম সহসাই প্রকাশ করা হচ্ছে না। তদন্ত কাজে জড়িত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পাওয়া তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমেই তাদের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
এরই মধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ চুরির ঘটনায় একাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে বেশকিছু প্রমাণও পাওয়া গেছে। হ্যাকিং করার কয়েকটি ইউজার আইডি সনাক্ত করতে পেরেছে কর্মকর্তারা। ফায়ার-আই নামক আইটি প্রতিষ্ঠানকেও দেওয়া হয়েছে এ তথ্য। তদন্তকারিরা আশা করছেন এই আইডি ব্যবহারকারিদের পাওয়া গেলেই বাকিদের খুঁজে বের করা যাবে। এজন্য আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকেও কাজে লাগানো হচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে তাদের পরামর্শ।
ফরেক্স রিবজার্ভের ডিলিংরুমের(যেখান থেকে বৈদেশিক রিজার্ভের অর্থ লেনদেন করা হয়) দুটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বন্ধ ছিল দুই দিন আগে থেকেই। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে তদন্তকারিরা। এদিকে গতকাল শুক্রবার ও শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টারনেট ক্যাবলে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ডাটা ট্রান্সফার ও ইউজার হিস্টোরির তথ্য মুছে ফেলা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততার কারণে সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেই তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করছে সাবধানতা নিয়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে প্রথমবারের মত এত বড় ঘটনায় পুলিশ ও র‌্যাব তাদের উদ্যোগেই ছায়া তদন্ত করছে। প্রয়োজনে যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে। এরই মধ্যে সন্দেহভাজন কয়েকজনের মোবাইল কললিস্ট যাচাই-বাঁছাই করে দেখছে তারা। কয়েকজনের বিদেশি কানেকশনও খতিয়ে দেখছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলেই তারা এগোবে। বিষয়টি স্পর্শকাতর ও অপরাধমূলক হওয়ায় পুলিশ ছায়া তদন্ত করে চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার মার্কিন ডলার হ্যাকিং করে নেয়ার চেষ্টার কথা স্বীকার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হ্যাকার নিতে পেরেছে। বাকি ৮৫ কোটি ডলার বেহাত হওয়া থেকে প্রতিহত করা গেছে বলে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাইবার আক্রমণে ৩৫টি ভুয়া পরিশোধ নির্দেশের ৯৫ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে ৩০টি নির্দেশের ৮৫ কোটি ডলার বেহাত হওয়া শুরুতেই প্রতিহত করা গেছে। অবশিষ্ট ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দুই কোটি ডলার এরই মধ্যে ফেরত আনা গেছে। বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৬৩৫ কোটি টাকা) ফেরত আনার প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
অথচ গত ৯ মার্চ প্রথমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা সাংবাদিকদের বলেছেন, হ্যাকড হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার (৮ কোটি ১০ লাখ ডলার) ফিলিপিন্সে গেছে। ২০ মিলিয়ন ডলার গেছে শ্রীলংকায়। ফিলিপিন্সে যে অর্থ গেছে, তার একটি অংশ এখনও সেখানকার ব্যাংকে আছে। আর কিছু টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে গেছে। শ্রীলংকার ব্যাংকে যে ২০ মিলিয়ন ডলার গিয়েছিল, সে অর্থ আমরা ইতোমধ্যে ফেরত পেয়েছি।
শ্রীলংকায় পাচার হওয়া অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্টে জমা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শুভঙ্কর সাহা প্রথমে জমা হয়েছে বলেই পূণরায় বলেন, এখনও জমা না হলেও সেটি জমা হবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
অথচ গতকাল শ্রীলংকার একিটি সংবাদপত্র জানিয়েছে, শীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে যে, কোন প্রকার টাকা প্রবেশ করেছে কিনা। পত্রিকাটি নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আরও জানায়, শ্রীলংকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন অর্থ প্রবেশ করে নি।