বছরে ৩ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করেন জাহিদ

মেহেরপুর সংবাদাদাতা: বিদেশ যাওয়ার হাতছানি তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, ছোটেননি চাকরির পেছনে। তিনি মেহেরপুর সদর উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের জাহিদ হাসান খাঁন। পড়ালেখা শেষ করে হাল ধরেছেন বাবার পেশা মাছ চাষে।

জাহিদ ব্যবহার করছেন আধুনিক প্রযুক্তি। উৎপাদন বাড়িয়েছেন কয়েকগুণ। এখন বছরে তিন কোটি টাকার মাছ বিক্রি করেন তিনি। কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন এলাকার ২৫ থেকে ৩০ জন বেকার যুবকের। তার এ সাফল্যে খুশি বাবাও।

আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য জাহিদ বাবার বন্ধ হয়ে যাওয়া পেশা মাছ চাষ শুরু করেন। প্রথমেই বাবার দুটি পুকুরে মাছ চাষ করেন। লাভবান হওয়ায় ৫ বছরে তার পুকুরের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০টিতে। মাছের খাবার ও বিভিন্ন জিনিসের দাম বৃদ্ধিতে মাঝপথে ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি। ভাবতে থাকেন বিকল্প পথে কিভাবে মাছ চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। যোগাযোগ করতে থাকেন মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তারাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন জাহিদ হাসানকে।

অফিসের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন ৬টি এ্যারোটার। পুকুরে পানিতে চালিয়ে যার মাধ্যমে মাছের অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। শুরু হয় অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ। ক্ষতির মুখে পড়ে অনেকেই যখন মাছ চাষ বন্ধ করে দিচ্ছেন সেখানে আধুনিক এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন তিনি। এখন তিনি ২০০ বিঘা জমির ৫৩টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন।
জাহিদ হাসান খাঁন জানান, আধুনিক এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্প ফ্যাটেনিংভাবে মাছ চাষ করছেন তিনি। অর্থাৎ ৫ থেকে ৬ কেজি ওজনের কাতলা, সিলভার, রুই ও পাঙ্গাস মাছের চাষ করছেন। সাথে মনোসেক্স ও তেলাপয়িা। ক্ষেত্র বিশেষ ২০ থেকে ২৫ কেজি ওজনের ও মাছ চাষ করেন।

যেগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবারাহ করেন। বিশেষ করে বিয়ে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে উপহার দেওয়ার জন্য মানুষ তার এ মাছ সংগ্রহ করেন। উপহারের জন্য বড় আকৃতির একেকটি মাছ বিক্রি করেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। তাছাড়া ৫ কেজি ওজনের মাছগুলো তিনি বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন জেলায়।

সামনের দিনগুলোতে প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে চান তিনি। অর্ডার দিয়েছেন মাছের খাবার দেওয়ার যন্ত্র। যার মাধ্যমে শ্রমিক ছাড়াই মাছের চাহিদা অনুযায়ী খাবার দিতে পারবেন। এছাড়াও তৈরি করেছেন একটি হ্যাচারি। যেখানে উৎপাদন করবেন অ্যাকুরিয়াম মাছের।

জাহিদের বাবা জাকির খাঁন জানান, ছেলের এমন সাফল্যে খুশি তিনি। কারণ চাকুরি করলে হয়তো নিজের চাহিদা পূরণ করতে পারতো। কিন্তু ছেলে নিজ উদ্যোগে কিছু করে দেখিয়েছে। আয়ের পথ তৈরি করেছে বেকার যুবকদের। এখনও ছেলেকে সাহায্য করে যাচ্ছেন তিনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইয়াহিয়া খাঁন জানান, মাছ চাষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এজন্য সমবায় ভিত্তিতে অ্যারোটারসহ বিভিন্ন যন্ত্র সরকারিভাবে মাছ চাষিদের সরবারহ করছেন। আর কিভাবে অ্যাকুয়ারিয়াম মাছ চাষ করা যায় মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে তারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে জাহিদ হাসানকে। যাতে এ ধরনের মাছগুলো আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে না হয়।