ফিলিপাইনে মুসলিমদের স্বায়ত্তশাসন এখন শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফিলিপাইনের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মিন্দানাও দ্বীপে স্বায়ত্তশাসনের প্রথম দফার গণভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বিপুল ভোটের ব্যবধানে বাঙসামোরো অর্গানিক ল (বাঙসামোরো জনগণের জন্য মৌলিক আইন) পাস হয়েছে।

ফলে দ্বীপটির মুসলিমদের স্বায়ত্তশাসন এখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ শুক্রবারের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম দফার গণভোটে আইনটির পক্ষে এত বেশি সমর্থন পড়েছে যে, দ্বিতীয় দফার গণভোটে তা নাকচ হওয়ার কোনো কারণই নেই। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফার গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বলেছে, গত ২১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত গণভোটের ফলাফলে দেখা যায়, ১৬ লাখ মানুষ আইনটির পক্ষে রায় দিয়েছে। আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে আড়াই লাখ।

গণভোটের এই বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন স্বাধীনতাকামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মুরাদ ইব্রাহিম। তবে তিনি একে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন।

মুরাদ ইব্রাহিম বলেন, ‘সত্যিই এটিকে আমরা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি, কারণ আমরা বিল্পব থেকে সরকারে যাচ্ছি। এটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে, কারণ আমাদের অনেকেই কখনও সরকারে ছিলাম না।’

প্রসঙ্গত, বাঙসামোরো মৌলিক আইনটি গত বছরের মে মাসেই ফিলিপাইনের পার্লামেন্টে পাস হয়। আইনটির পক্ষে ভোট দেন ২২৭ জন। আর বিপক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ১১টি।

তবে মুসলিমদের স্বায়ত্তশাসনের অধীনে আরো বেশি এলাকা থাকবে কি না সে প্রশ্নেই এই গণভোটের আয়োজন করা হয়।

মোরোদের স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে দীর্ঘ বছরের প্রচেষ্টা থাকলেও সম্প্রতি দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুর্তেতে। কারণ তিনি ওই অঞ্চলে ২২ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।

আর আইনটি কার্যকর হলে দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যাতে প্রায় এক লাখের মতো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

১৮৯৮ সালে স্প্যানিশরা যখন ফিলিপাইনকে আমেরিকানদের হাতে তুলে দেয় তখন থেকেই ওই অঞ্চলে মুসলমানদের স্বাধীনতা চলে যায়। এর আগে পুরো ষোড়শ শতক স্প্যানিশরা ফিলিপাইন শাসন করে।

এরপর ১৯৪৬ সালে আমেরিকানরা ফিলিপাইনের শাসনভার খ্রিস্টানদের হাতে তুলে দেয়। তারপর ম্যানিলা সরকারের খ্রিস্টান স্যাটেলমেন্ট নীতির কারণে এখনও বঞ্চিতই হচ্ছেন বাঙসামোরো জনগণ।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার সমান আয়তন বিশিষ্ট মিন্দানাও ফিলিপাইনের সবচেয়ে অনুন্নত এলাকা। কিন্তু সেখানে নিকেলের খনি পাওয়া গেছে এবং বড় বড় ফলের বাগান রয়েছে। এ ছাড়া সরকার সেখানে পাম অয়েলের ফার্ম করতে চাইছে। যুগের পর যুগ ধরে চলা যুদ্ধ, আইন শূন্যতা ও সংঘাতের কারণে বিনিয়োগকারীরা সেখানে যেতে আগ্রহী ছিল না।

উল্লিখিত বিল পাস হওয়ায় স্থানীয় শাসকবর্গ, আইন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা থাকবে। তবে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বৈদেশিক নীতি ও অর্থ সংক্রান্ত নীতি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।

সেইসঙ্গে আইনটি কার্যকর হলে ওই অঞ্চলের মোরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট (এমআইএলএফ) ও অন্যান্য বিদ্রোহী তথা স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলত সংগঠনগুলো তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।