ফযীলতপুর্ণ পবিত্র শবে বরাত

আজ পবিত্র শবে বরাত

মাওলানা যাকারিয়া সুনাম: হাদীছ শরীফের উদ্ধৃতি , হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া কবুল হয়। রজবের প্রথম রাত্র, শাবানের মধ্য রাত্র বা ১৪ তারিখ দিবাগত রাত্র, ক্বদরের রাত্র এবং দু’ঈদের দু’রাত্র।’

হাদীছ শরীফ-এর উদ্ধৃতি , সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘যখন তোমরা বরাতের রাত্রি পাবে তখন তোমরা সারা রাত্রি জেগে-জেগে নামায-কালাম পড়বে বেশি বেশি দুয়া ও তওবা-ইস্তিগফার করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি সেই রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে এসে অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করে ফজর তথা ছুবহি ছাদিক হওয়া পর্যন্ত ঘোষণা দিতে থাকেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ ক্ষমাপ্রার্থী আছ কী? তাকে আমি ক্ষমা করে দিব। কেউ রিযিক প্রার্থী আছ কী? আমি তাকে রিযিক দান করব। কেউ বিপদগ্রস্ত আছ কী? তার বিপদ দূর করে দিব।” (সুবহানাল্লাহ)

কাজেই বান্দা যদি এ রাতে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করে তবে অবশ্যই আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং শবে বরাত-এর সকল রহমত, বরকত ও নিয়ামত দান করবেন। কেননা, আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “তোমরা আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক কাউকে ক্ষমা করার জন্যে, রহমত করার জন্যে, তার মর্যাদা-মর্তবা দেখেন না। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি একটা উছীলা পেলেই বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।

সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কায়িনাতের, সমস্ত মাখলুকাতের যত আরজু, যত আকাঙ্খা রয়েছে তা সব যদি আল্লাহ পাক পূর্ণ করে দেন তাহলে আল্লাহ পাক-এর নিয়ামতের কতটুকু তারা লাভ করবে, মহাসমুদ্রে একটি সূচ ডুবিয়ে আবার তুললে তার মাথায় যতুটুকু পানি উঠে আসবে তার চেয়ে বেশি নয়। কাজেই আল্লাহ পাক-এর নিকট সব চাইতে হবে, বেশি বেশি চাইতে হবে। ইয়াক্বীনের সাথে চাইলে অবশ্যই আল্লাহ পাক দিয়ে দিবেন।

শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। এক হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যে শা’বানের মধ্যম রাতে ইবাদতে মশগুল থাকে।”

হাদীছ শরীফের উদ্ধৃতি  ‘এ রাত্রিতে বান্দার প্রতি রহমতে খাছ নাযিল করা হয়। বনি ক্বলব, রবি ও মুদার গোত্রের মেষপালের যত সংখ্যক পশম রয়েছে তার চেয়ে বেশি সংখ্যক উম্মতে মুহম্মদীকে আল্লাহ পাক এ রাত্রিতে ক্ষমা করে থাকেন।’

বাইহাক্বী শরীফের হাদীছ শরীফের উদ্ধৃতি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এ রাত্রিতে (আগামী এক বছরে) যে সকল আদম সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং ইন্তিকাল করবে তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। বান্দার (এক বছরের) রিযিকের ফায়সালা করা হয় এবং বান্দার (বিগত এক বছরের) আমলনামা আল্লাহ পাক-এর নিকট পেশ করা হয়।’

শবে বরাত হচ্ছে দোয়া কবুলের খাছ রাত। বান্দার সর্বপ্রকার নেক দোয়া, নেক আরজু আল্লাহ্ পাক এ রাতেই কবুল ও পুরণ করে থাকেন। তাই বান্দার উচিত এ মুবারক রাতে জাগ্রত থেকে যার যা নেক্ দোয়া, নেক্ আরজু রয়েছে তা দরবারে ইলাহীর নিকট পেশ করা। তবে দৃঢ়তার সাথে খালিছভাবে তা চাইতে হবে। কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ না করা। ইয়াক্বীন রাখতে হবে, আমার সব দোয়া এবং সব আরজুই আল্লাহ্ পাক অবশ্যই কবুল করবেন এবং অবশ্যই পূরণ করে দিবেন। মূলতঃ বান্দার কোন দোয়াই আল্লাহ্ পাক ফিরিয়ে দেননা। সবই কবুল করে থাকেন। বান্দা কোনটা বুঝে এবং কোনটা বুঝে না।