প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা: ভর্তি পরীক্ষায় আয়ের কৌশল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাবি অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের শেষ ভরসা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলো। কিন্তু এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর সাত কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শেষের পথে। অথচ আগে কখনোই এমনটি হয়নি। এতে হাজারো শিক্ষার্থীর আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিপাকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেছেন, তারা যদি পরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজের কোনোটিতে ভর্তির সুযোগ পান, তবে বড় অংকের টাকা গচ্চা দিতে হবে। কেননা, সেক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিশোধ করা ভর্তির আবেদন ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ভর্তির জন্য পরিশোধ করা টাকা ফেরত পাবেন না তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৌশল হিসেবেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সবার আগে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া, এতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পরে ভর্তি বাতিলের কারণে বিপুলসংখ্যক আসন শূন্য হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিপরীতে, হাজারো শিক্ষার্থী থাকবেন, যারা কোথাও ভর্তির সুযোগ পাননি। পরে পরীক্ষা হলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা এগুলোয় ভর্তি হতে পারতেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বুঝে শুনেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্যই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই কাজটি করেছে। রাজধানীর সাত কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার জের ধরে এমনটি করা হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, অর্থ নয় বরং ‘ক্রাশ প্রোগ্রামের’ আওতায় সেশন জট কমানোর জন্যই ভর্তি কার্যক্রম সবার আগে শুরু করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারাদেশের তিন লাখ ৯১ হাজার ৫৫টি আসনের বিপরীতে ২০ সেপ্টেম্বর শেষ দিন পর্যন্ত আবেদন পড়ে পাঁচ লাখ ৩১ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্লাসও শুরু করেছে ১৫ অক্টোবর থেকে।
চলতি ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু করে ২৪ আগস্ট থেকে। তার আগের ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে আবেদন গ্রহণ শুরু করেছিল ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে। আর ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরু করেছিল ১ অক্টোবর থেকে। এবার দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে অক্টোবর থেকে।
রাজধানীর সাত সরকারি কলেজে স্নাতক শ্রেণির প্রায় ২০ হাজার আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে ১ ডিসেম্বর থেকে।
এদিকে, গত ২০ নভেম্বর এক নোটিশে দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের তালিকাকে সর্বশেষ তালিকা উল্লেখ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার ইঙ্গিত দিয়েছে।শিক্ষার্থী প্রতি ভর্তির আবেদন এবং রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েছে ৭৩৫ টাকা করে। আবার ভর্তি ফি বাবদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলো নিয়েছে পাঁচ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হওয়া শাওন তালুকদার বলেন, ‘আমি গ্রামের ছেলে। বাবা কৃষক। অনেক কষ্টে এ কলেজে ভর্তি হয়েছি। আবার ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছি। যদি এর কোনোটিতে ভর্তির সুযোগ পাই, তাহলে আমি বিজ্ঞান কলেজ থেকে ভর্তি বাতিল করবো। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তির আবেদন ফি ও রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৭৫০ টাকা এবং ভর্তি ফি বাবদ নেয়া প্রায় ১৫ হাজার টাকা তো ফেরত দেবে না।’ শাওন তালুকদার বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কৌশলে বিপুল টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেই আগেভাগে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে। শাওন তালুকদারের মতোই তার কয়েকজন বন্ধুর এ প্রতিবেদকের কাছে একই অভিযোগ করেন।
রাজধানীর সিটি কলেজে ভর্তি হওয়া আসিফুল কাদির বলেন, ‘গত বছর তো রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। এখন এগুলো ঢাবি অধিভুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই এই সাত কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকেও এগিয়ে রয়েছে। ফলে কেউ যদি ঢাবি অধিভুক্ত এসব কলেজে ভর্তি হওয়া সুযোগ পায় তাহলে তারা কেউ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজে যাবে না। আমি নিজেও সুযোগ পেলে অন্য কোথাও চলে যাবো।’
ভর্তির টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কোষাগারে সেই টাকা পৌঁছে যায়। ভর্তি বাতিল করলেও সেই টাকা ফেরত দেয়ার সুযোগ আমাদের হাতে নেই।‘