কটুক্তিকারী সেই হিন্দু প্রধান শিক্ষককে কানে ধরে উঠবস করিয়ে বিদায়

নিউজ নাইন২৪, না’গঞ্জ: বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের কটুক্তিকারী সেই প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে জনসম্মুখে কান ধরে উঠবস করিয়ে মুচলেকা দেওয়ার পর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই সাথে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে চাকুরীচ্যূত এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামকে বহিস্কার করে নতুন কমিটি গঠন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন না’গঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

শুক্রবার ১৩ মে বিকেল সাড়ে ৪টায় বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যানন্দি এলাকায় পিআর সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এ নির্দেশ দেন।

এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থী সুত্রে জানা গেছে, গত ৮ মে বন্দরের কল্যান্দি এলাকার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর  ছাত্র রিফাতকে প্রহার করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। সে মার খেয়ে আল্লাহ রাসুলের নাম বলে উঠলে প্রধান শিক্ষক তা নিয়ে কটুক্তি করে বলেন কিসের ইসলাম, তোদের আল্লাহ-নবী নাপাক তোরা মুসলমানরাও নাপাক। তার বেধরক পিটুনিতে ছাত্র রিফাত অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ছাত্র রিফাতের মায়ের কাছে ধর্ম নিয়ে শিক্ষকের কটুক্তির কথা ও মারধরের কথা শুনে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সভা চলাকালে ব্যাপক জনরোষ তৈরি হয়। উত্তেজিত এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানায় ব্যাপক গণধোলাই দেয়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ এসে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে উদ্ধার করলেও উত্তেজিত জনতা প্রায় ৬ ঘন্টা পুলিশ ও শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে।

এরমধ্যে স্কুলে এসে উপস্থিত হয় জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত(ইউএনও) মৌসুমী হাবিব, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম নুরুল আমিন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, সহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

এসময় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের ফাঁসি দাবি ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামের বহিস্কার দাবি করে স্লোগান দিতে থাকে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীকে শান্ত করতে ব্যর্থ হয়ে দুপুর আড়াইটায় বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে অবগত করেন। তখন সেলিম ওসমান মোবাইল ফোনে এলাকাবাসীকে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহবান জানিয়ে তাদেরকে শান্ত থাকতে বলেন এবং তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী শান্ত হয়ে স্কুলের ভেতরে অবস্থান করে থাকেন। পরে বিকেল ৪টায় পিআর সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হোন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে ঘটনা জানতে চান। এসময় স্থানীয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধর করা সহ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়টি তুলে ধরেন। সেই সাথে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যোগ সাজশে স্কুলের ভেতরে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাদের শাস্তি দাবি করেন।

সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান স্থানীয় প্রশাসন ও অভিযুক্তের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত নিজের অপরাধ স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে কান ধরে মুচলেকা দেন। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে তাকে পুলিশ হেফাজতে রেখে চিকিৎসা প্রদান করে তাকে স্কুলের আয়-ব্যয়ের অনিয়মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন।

সেই সাথে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্কুল থেকে চাকুরীচ্যূত এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলামকে কমিটি থেকে বহিস্কার করে নতুন কমিটি গঠন করতে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মৌসুমী হাবিবকে নির্দেশ প্রদান করেন। পাশাপাশি স্কুলের চাকুরীচ্যূত ও বহিস্কৃতদের কাছ থেকে স্কুলের আয় ব্যয়ের হিসাব বুঝে নেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল আমিনকে নির্দেশ প্রদান করেন সেলিম ওসমান।

এ সময় সেলিম ওসমান বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে আপনারা যে কাজটি করেছেন সচেতন নাগরিক হিসেবে এটাই আপনাদের দায়িত্ব। যেখানেই অন্যায় হবে সেখানেই আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। তবে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে কোন প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে কোন অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। আমি আপনাদের গোলামির দায়িত্ব নিয়েছি আমাকে জানাবেন আমি আপনাদের গোলামি করার জন্য হাজির হয়ে যাবো। আপনারা আমার আহবানে সাড়া দিয়ে শান্ত থেকেছেন আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন এবং আমার সিদ্ধান্তের উপর আস্থা রেখেছেন এর জন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, যদি বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ে হিসাবে কোন প্রকার দুর্নীতির প্রমান পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় তার বিচার করা হবে।

এ সময় স্থানীয় জনতা বিচারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সংসদ সদস্যের নামে স্লোগান দেন। পরে পুলিশ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে থানায় নিয়ে যায়।

পিয়ার সাত্তার লতিফ হাই স্কুল
ছবি: পিয়ার সাত্তার লতিফ হাই স্কুল

এ সংক্রান্ত আরো খবর:

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে গণধোলাই