পাহাড়ে সব সুবিধাভোগী উপজাতিরা, দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বাঙ্গালীরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশেরই একটি ভুখন্ড। কিন্তু সেই পার্বত্য চট্টগ্রামেই অবহেলিত হচ্ছে স্বাধীন দেশের বাঙ্গালী নাগরিকরা। পরিবর্তে সেখানে অনুপ্রবেশ করেছে ভিনদেশী উপজাতি সন্ত্রাসীরা। যাদের অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, হত্যা ইত্যাদিতে পার্বত্য জেলাগুলোর বাঙ্গালীরা যেন নিজভূমে পরবাসযাপন করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বাঙালি। তুলনামূলকভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ গুচ্ছগ্রামগুলোতে যে কষ্টার্জিত জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে, তাতে রয়েছে শিক্ষার অভাব, কর্মসংস্থানের অভাব আর রয়েছে সীমাহীন দারিদ্র্য। দেশের বৈধ নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তারা সরকারি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। পাশাপাশি উপজাতি হানাদার সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে খাগড়াছড়ি জেলার বাবুছড়ার নিকটস্থ সোনামিয়া টিলায় ৮১২ বাঙালি পরিবারের কাছে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তারা নিজ জমিতে যেতে পারছে না। তারা কয়েক পুরুষ ধরে গুচ্ছগ্রামগুলোতে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে।

দেশের অখ- পার্বত্য জনপদে বাঙালিরা এমনিতেই দীর্ঘদিন যাবৎ অঘোষিতভাবে ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক’ হিসেবে কোনমতে টিকে আছেন, বর্তমান সময়ে আরও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছেন। তারা কার্যত ‘তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে’ বসবাস করছেন। ভূমিস্বত্ব, খাবারের সংস্থান, জানমালের নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরি, ব্যবসাসহ কর্মসংস্থানের মতো মৌলিক মানবাধিকার থেকে বাঙালিরা একচেটিয়াভাবেই বঞ্চিত রয়েছেন। গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি মুসলমানরা নিজদেশে পরবাসীর মতো এক দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যন্ত ও দুর্গম পার্বত্য এলাকায় গুচ্ছগ্রামগুলোর বাসিন্দাসহ ‘অভ্যন্তরীণ শরণার্থী’ বা ‘অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু’ হিসেবে বিবেচিত প্রায় ১ লাখ বাঙালি সপরিবারে দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখারও কেউই নেই। পার্বত্যাঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দাদের মাঝেও জীবন-জীবিকার তেমন কোন অবলম্বন নেই অনেকেরই মাঝে। উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ ছাড়াও বিভিন্ন অবৈধ সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অত্যাচার-নিপীড়নে প্রতিনিয়তই বাঙালিদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ অবস্থায় কাটছে।

অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপজাতীয় গোষ্ঠী বিশেষ করে সংখ্যাধিক্যে ও অনেকেই অপরিমেয় জৌলুসপূর্ণ জীবনযাত্রায় থাকা চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা উপজাতীয় গোষ্ঠীর যে কেউ চাইলেই রাজধানী ঢাকার গুলশান, বারিধারা, উত্তরা, বনানী, ধানমন্ডি, বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের খুলশী, নাসিরাবাদ, পাঁচলাইশে জমি, প্লট, ফ্ল্যাট, এপার্টমেন্ট ইত্যাদির মালিক হতে পারছে অনায়াসেই। এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়ও অনেক উপজাতি নাগরিক স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। অথচ কোন অউপজাতি তথা বাঙালি মুসলমান পার্বত্য চট্টগ্রামের কোথাও জমি কিনতে কিংবা বসতি স্থাপন করতে পারছেন না। তারা সব দিক থেকেই মৌলিক মানবাধিকার বঞ্চিত। শুধু তাই নয়, যারা বর্তমানে পার্বত্য জনপদে পিতৃপুরুষের জন্মের সুবাদে বসবাস করছেন সেই সব বাঙালি মুসলমান নাগরিকদের বিভিন্ন মারপ্যাঁচে নিজ জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ ও বিতাড়নের শত রকমের অপচেষ্টা চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কোন উপজাতীয় নাগরিকের জন্য নিম্নশিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার সকল স্তরে বিশেষ উপজাতীয় কোটার মাধ্যমে পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দ রয়েছে। সেই সুবাদে বর্তমানে চাকমা উপজাতির মাঝে শিক্ষার হার শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ। অন্যান্য উপজাতির মাঝেও শিক্ষার হার সমতলের বাঙালি জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক বেশি রয়েছে। অথচ বাঙালি মুসলমানদের জন্য শিক্ষার কোন ধরণের বিশেষ সুযোগই রাখা হয়নি। পার্বত্য জনপদে বাঙালি শিক্ষিতের হার প্রতিনিয়তই কমছে, যা বর্তমানে ২০ শতাংশেরও নিচে।

তাছাড়া সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও বিশেষ উপজাতি কোটায় চাকরি লাভের সুযোগ রাখা হয়েছে অবারিত। এতে করে চাকরিতে যথেষ্টহারে উপজাতি গোষ্ঠীর লোক সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু বাঙালি মুসলমান নাগরিকরা এক্ষেত্রে সকল সুযোগ থেকে বঞ্চিত। শিক্ষিত এমনকি উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে সাধারণ বাঙালিদের মাঝে। চাকরি শুধু নয়; পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি, কৃষি-খামার, পোলট্রি থেকে শুরু করে কর্ণফুলী হ্রদে মাছ শিকারের মতো যে কোন পেশা নিয়েও জীবনধারণ করতে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেননা এ ধরনের যে কোন কাজে নিয়োজিত থাকতে গিয়ে পাহাড়ি উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে মোটা অংকের চাঁদা বা ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর লোকজনকে তাদের চাঁদার দাবি মেটাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বাঙালি নাগরিকরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের জীবনধারণ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার চাঁদার দাবি না মেটালে যে কোন সময়ই জীবননাশের হুমকি নেমে আসে।