পার্লামেন্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন সিরিসেনা: শ্রীলংকার ইস্যুতে উদ্বেগে চীন-ভারত

শ্রীলংকার চলমান সাংবিধানিক দ্বন্দ্ব বেশ উদ্বেগ নিয়েই পর্যবেক্ষণ করছে এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি চীন ও ভারত। নিজেদের কৌশলগত যুদ্ধে শ্রীলংকায় কোন পক্ষের স্বার্থ রক্ষা পাবে, তার অপেক্ষাতেই রয়েছে দেশ দুটি। অন্যদিকে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা পার্লামেন্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়ে ৫ নভেম্বর সংসদ অধিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন। খবর এএফপি, আল জাজিরা।

মাত্র এক মাসের মধ্যেই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলটি দ্বিতীয়বারের মতো চীন-ভারতের রণক্ষেত্রে পরিণত হলো। এর আগে মালদ্বীপের বিতর্কিত প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে চীনপন্থী নেতাকে পরাজিত হতে দেখা গেছে। চীন ও ভারতের মতো রাঘববোয়ালের তুলনায় শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ খুবই ক্ষুদ্র শক্তির অধিকারী। কিন্তু দেশ দুটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বাণিজ্য এবং এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে তেল সরবরাহের পথে অবস্থিত, যা শ্রীলংকা ও মালদ্বীপকে এশীয় পরাশক্তি দুটির কৌশলগত স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

সম্প্রতি শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বদলে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। এরপর দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। নয়াদিল্লি ও বেইজিং হস্তক্ষেপ না করেই পুরো বিষয়টিকে পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছে।

কলম্বোর এক কূটনীতিক জানান, পার্লামেন্ট স্থগিত ও দুপক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক খেলায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ভারত ও চীনের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। রাজাপাকসের জন্য চীন কলকাঠি নাড়ছে বলে বিক্রমাসিংহের পক্ষের এক আইনপ্রণেতা অভিযোগ করেছেন। তবে দ্রুতই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বেইজিং। চীনা দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন।

শ্রীলংকার সাংবিধানিক সংকট দুই পরস্পরবিরোধী চরিত্রকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। একদিকে সংস্কারবাদী টেকনোক্র্যাট ও মুক্ত বাজারের সমর্থক বিক্রমাসিংহে, যিনি সবসময়ই চীনের সঙ্গে একতরফা অর্থনৈতিক চুক্তিগুলোর বিরোধিতা করে এসেছেন এবং ভারতের প্রতি নমনীয় ছিলেন। অন্যপক্ষে রয়েছেন রাজনৈতিকভাবে বলিষ্ঠ, ক্যারিশমাটিক কিন্তু কর্তৃত্ববাদী শাসনের জন্য সমালোচিত রাজাপাকসে। তার এক দশকের শাসনামলে শ্রীলংকার তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়। এছাড়া তিনি বেইজিংয়ের বেশ ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত। তার আমলে সড়ক ও বন্দর থেকে শুরু করে কলম্বোয় ভূমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি ডলারের চীনা বিনিয়োগ হয়েছে।

গত শুক্রবার বিক্রমাসিংহেকে সরিয়ে রাজাপাকসেকে নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি পার্লামেন্ট স্থগিত করেন সিরিসেনা। গতকাল কলম্বোয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠকে ৫ নভেম্বর সিরিসেনা সংসদ অধিবেশন আহ্বান করেছেন বলে জানান নতুন নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে।