পাকিস্তানের বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:পাকিস্তান গত চার দশক ধরে খুবই কঠিন ভূ-কৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। অতীতে পাকিস্তান ছিল পাশ্চাত্যের প্রিয়পাত্র। কিন্তু পাকিস্তানের যখন মিত্রদের কাছ থেকে সহায়তার প্রয়োজন ছিল, তখন হতাশার শিকার হয়েছে। এখন পাকিস্তান তার পররাষ্ট্রনীতির পুনর্বিন্যাস করে পূর্ব দিকে নজর দিয়েছে। নতুন নেতা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন। এতে করে ইসলামাবাদের পক্ষে তার জাতীয় স্বার্থ আরো ভালোভাবে রক্ষা করার সুযোগ পাবে।

পাকিস্তান তার জনগণের অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোকে কেন্দ্র করে তার পররাষ্ট্রনীতি ঢেলে সাজিয়েছে। বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি)। আর বহুমেরুর বিশ্বব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিআরআই এগিয়ে নিতে চাচ্ছে চীন।

চীনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ইউরোপিয়ান দেশগুলোও সাড়া দিতে শুরু করেছে। প্রথম যে দেশটি বিআরই পরিকল্পনায় সাড়া দেয়, সেটি হলো ইতালি। তারা পালারমোকে বেল্ট অ্যান্ড রোডের বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চুক্তিতে সই করেছে।

এখন পর্যন্ত চীনা কোম্পানিগুলো বিআরআইয়ের আওতায় ৩৪টি দেশে প্রায় ৪২টি বন্দর নির্মাণ ও কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করেছে। বিআরআই বাণিজ্য রুটে সংযোগ সাধন করতে চীন ৪৭ দেশের সাথে সমুদ্র চুক্তি ও ৩৮টি দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে সই করেছে। চীনা শিপিং কোম্পানি কসকো ও অন্যান্য চীনা কোম্পানির প্রধান কৌশল হলো ছোট ছোট ইউরোপিয়ান সমুদ্রবন্দরে বিনিয়োগ করে সেগুলোকে উন্নত করা।

মস্কোভিত্তিক আমেরিকান রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্দ্রে করিবকো মনে করেন, পাকিস্তান যদি করিডোরটিকে সৃষ্টিশীলভাবে ব্যবহার করতে পারে তবে দ্রুত বদলাতে থাকা বিশ্ব থেকে ফায়দা তুলতে খুবই সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে।

পাকিস্তান সঙ্ঘাত এড়িয়ে তার আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত, আফগানিস্তান, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে সিপিইসির সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ইশরাত হোসাইন বলেন, প্রতিবেশীদের সাথে আমাদের সম্পর্ক রাজনৈতিক না হয়ে অর্থনৈতিককেন্দ্রিক হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, মধ্য এশিয়ার প্রতিবেশী আফগানিস্তান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। আবার নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদও একত্রিত হতে পারে দীর্ঘ দিন ধরে অমীমাংসিত থাকা কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করে।

পাকিস্তানের আরেকটি সাফল্য হলো রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা। এর জের ধরে পাকিস্তানের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে রাশিয়া।

মধ্যপ্রাচ্য ফ্রন্টে পাকিস্তানের সফলতার প্রমাণ হিসেবে রিয়াদ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ চুক্তি করতে পেরেছে। সৌদি আরব সিপিইসিতে বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

পাকিস্তানি পত্রিকা দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে বলা হয়েছে, ইরান ইঙ্গিত দিয়েছে তারা পাকিস্তান-রাশিয়া-চীন ত্রিপক্ষীয় জোটে জোটে যোগ দিতে পারে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য। এদিকে ন্যাটোর মিত্র তুরস্ক এখন ইসলামাদের সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করছে। কাতারও আমেরিকার বলয় থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে।

ফলে পাকিস্তান এখন বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। করিবকোর ভাষায়, পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতিশীল অর্থনীতি বেশ সম্ভাবনাময়, এর আন্তর্জাতিক কানেকটিভিটি সক্ষমতাপূর্ণ, এর ভূকৌশলগত অবস্থান নজিরবিহীন। সেইসাথে আছে বিশ্বমানের সেনাবাহিনী। এসবের সমন্বয়ে দেশটি ২১ শতকে গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে।