পর্যবেক্ষণের আওতায় আসছে ডাক বিভাগের ‘নগদ’
নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেতে যাচ্ছে ‘নগদ’। ডাকঘরের এই সেবাটি অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।
বাংলাদেশে এই সেবাটি সর্বপ্রথম চালু হয় ২০১০ সালে। এটি এমএফস সেবা হলেও মোবাইল ব্যাংকিং নামে পরিচিতি পাচ্ছে। এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের লেনদেন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও বাজার তদারকি করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ‘নগদ’ বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে পোস্ট অফিস অ্যাক্ট, ১৮৯৮ (সংশোধনী, ২০১০) অনুযায়ী।
দেশের এমএফএসের সেবা অনুমোদন ও তদারককারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু নগদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় এর লেনদেন-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রমই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে সন্দেহজনক লেনদেন তদারকি ও মানি লন্ডারিং আইন পরিপালনে ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে।
অপরদিকে দেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সীমার সঙ্গে নগদ-এর সীমার পার্থক্যের হার অনেক বেশি। এতে বাজারে ভারসাম্য বজায় থাকছে না, একটি প্রতিযোগী পরিবেশও থাকছে না। এ নিয়ে অন্যান্য এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আপত্তি জানিয়ে আসছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে মানি লন্ডারিং আইন পরিপালন দুরূহ হয়ে পড়ে। এর সমাধানে বিএফআইউর পক্ষ থেকে একাধিকবার বৈঠক হয় ডাক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। ওইসব বৈঠকে নগদ কর্তৃক মানি লন্ডারিং আইন ও ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন-সংক্রান্ত গাইডলাইন, সার্কুলার, লেনদেন পর্যবেক্ষণ প্রভৃতি পরিপালনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনার পরে ডাক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এসব বিষয় পরিপালনের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। তারপরই সম্প্রতি বিএফআইইউর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশ করা হয় নগদকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুমোদন পেতে আবেদন করে নগদ কর্তৃপক্ষ। বিএফআইইউর সেই সুপারিশের আলোকে নগদ’কে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নগদ’কে অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ও দমন কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্রীয় ট্যাস্ক ফোর্সের সভায়ও বিষয়টি আলোচিত হয়। সভায় জানানো হয়, নগদকে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জানা গেছে, অতি শিগগিরই এমএফএস হিসেবে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে নগদ। অনুমোদন পাওয়ার পর থেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে নগদ-এর সব ধরনের কার্যক্রমের ওপর পর্যবেক্ষণ করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশ্বে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবাদাতার ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এগুলো হচ্ছে ব্যাংক মডিউল ও অন্যটি হচ্ছে টেলিকম মডিউল। অর্থাৎ ব্যাংক ও টেলিকম বা মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে এই সেবা পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশে ব্যাংক লেড মডিউল অনুসরণ করা হয়। ফলে এমএফএস সেবা ব্যাংকবহির্ভূত কোনো প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না। আবার বাংলাদেশের পেমেন্ট সিস্টেমটি দেখভালের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের।
ডাক বিভাগের নগদ সেবাটিও এমএফএস প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন নিতে আবেদন করা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। কিন্তু আবেদনটিতে না করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ। এ নিয়ে বহু সমালোচনাও তৈরি হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি শেষে দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৮১ হাজার ৫৩৭টি। ডিসেম্বরে এ মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৪২ হাজার ১০৩ কোটি ২২০ লাখ টাকা। মোবাইলের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিলসহ অনেক ধরনের চার্জ পরিশোধ সুবিধা যুক্ত হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এ লেনদেন।