পবিত্র রমজানের বাজার মনিটরিং করবে গোয়েন্দা দল

নিউজ ডেস্ক: বাজার মনিটরিংবিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও আসন্ন রমজানে বাজার মনিটরিংয়ে নামবে একাধিক গোয়েন্দা দল। জানা গেছে, আসন্ন রমজানের আগেই দেশের চারটি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক দল বাজার যাচাইয়ে নামবে। নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি মনিটর করবেন তারা। বাজার মনিটরিংয়ের গোয়েন্দা দলে র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের সদস্যরাও থাকবেন। অবৈধ মজুতের সন্ধান পেলে মজুতকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান হচ্ছে- জিরো টলারেন্স। অতীতের ন্যায় এ বছরও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র।

জানা গেছে, যেকোনও উছিলায় নিত্যপণ্যের বাজার যাতে অস্থির না হয় সেদিকে সতর্ক নজর রাখছে সরকার। এ কারণেই সরকারের এই আগাম ব্যবস্থা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজানে কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রতিবছরই বাজার পরিস্থিতি বিশেষ করে সরবরাহ ও মজুত পরিস্থিতি জানতে ও তদারকিতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে কাজ করে। এ বছরও করবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এ টিম বাজারে নামবে। কোথাও কোনও সমস্যা দেখলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেভাবে ব্যবস্থা নেবে।

বাজার বিশ্লেষকদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণে প্রশাসনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে, নিত্যপণ্যের দর তদারকিতে টিসিবিকে ( ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) আরও সক্রিয় করতে পারলে আসন্ন রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্য সহজ হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বেলারুশ যাওয়ার আগে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে রমজানে পণ্যমূল্য, সরবরাহ ও মজুত পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা জানিয়েছেন, রমজানে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের ব্যাপক মজুত রয়েছে। সরবরাহে কোনও সমস্যা নেই। তাই এবার নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘শুধু রমজানে নয়, সারা বছরই দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে, দাম বাড়বে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি জানিয়েছেন, পণ্যের দাম যেসব কারণে বাড়ে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সড়কে চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজি রোধে ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের সব বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে রমজানে বাজার মনিটরিং করা হয়। কমিশনারগণ যাতে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন সেজন্য লিখিত চিঠি পাঠানো হয়েছে বিভাগীয় কমিশনারদের কাছে।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আসন্ন রমজানকে পুঁজি করে ইতোমধ্যে বেড়েছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। এর মধ্যে পেঁয়াজ উল্লেখযোগ্য। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, অধিক পরিমাণে বৃষ্টির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। তবে এখন পর্যন্ত পণ্যের সরবরাহে কোনও সমস্যা নেই। বৃষ্টির সমস্যা সাময়িক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চাহিদার তুলনায় দেশে পণ্যের মজুত সন্তোষজনক। দেশে কোনও পণ্যের ঘাটতি নাই। সব ধরণের পণ্যের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরাও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রমজান উপলক্ষ্যে নিত্যপণ্যের মজুদ পরিস্থিতি দেখতে বাজারে নামছে দেশের চারটি গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে একাধিক দল। পণ্যের মজুত, চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি মনিটরিং করবে এসব দল। এ সময় তারা পণ্যের দাম ও মান যাচাই করবেন। ভাউচারের সঙ্গে কোনও ধরনের অসঙ্গতি দেখলে বা প্রতীয়মান হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এজন্য ব্যবসায়ীদের কাছেও সহযোগিতা চাওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী নেতা গোলাম মাওলা জানিয়েছেন, পাইকারি পর্যায়ে দেশে কোনও পণ্যের সংকট নেই। সব ধরনের পণ্যের ভালো মজুত আছে। দাম পাইকারি পর্যায়ে বাড়ে না। দাম বাড়ে খুচরা পর্যায়ে। তারা অধিক মুনাফা করে। তাই মনিটর করা প্রয়োজন খুচরা বাজার।

তিনি আরও বলেন, পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারে পণ্যের দামের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আমরা সরকারকে বার বার বলেছি, ভাউচার সংরক্ষণ প্রথা চালু করা হোক। এই প্রথা চালু হলে বোঝা যাবে পাইকারি পর্যায়ে কতো দাম দিয়ে কিনে খুচরা বাজারে তা কতো দামে বিক্রি হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বিশেষ বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চালাবে মন্ত্রণালয়। এজন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২/৩টি প্রস্তুতিমূলক বৈঠকও করা হয়েছে। চূড়ান্ত করণীয় নির্ধারণে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ জেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা বাজার মনিটরিং ছাড়াও ব্যবসায়ীদেরকে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেবেন এবং কেউ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা  জানান, ২০০৭ সাল থেকে ঢাকা শহরের বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি মনিটরিং দল রয়েছে। একজন উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন করে কর্মকর্তা এবং পুলিশ ও র‌্যাবের সমন্বয়ে এ দল গঠিত। তিনি বলেন, তারা নিয়মিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও অনিয়মের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে থাকেন।

সূত্র জানায়, প্রতি বছরই রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে একটি মহল বেশি লাভের আশায় বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে। তাই আসন্ন রমজানে বাজার মনিটরিং সিস্টেম জোরদার করতে সরকার গঠিত বাজার মনিটরিং কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এদিকে রমজানের আগেই বাজারে নেমেছে টিসিবি। টিসিবির চেয়ারম্যানের দফতর সূত্র জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টিসিবির এ কার্যক্রম চলবে।