নেপালে র-প্রধানের সফরের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের গুঞ্জন

নেপালে র-প্রধানের সফরের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের গুঞ্জন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত দুই সপ্তাহের দুটি ঘটনা কাঠমান্ডুর কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক ও বিরোধ উস্কে দিয়েছে। একটি হলো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)-এর প্রধান সামন্ত গোয়েলের নেপাল সফর এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল পম্পেওর দক্ষিণ এশিয়া সফর। পম্পেও ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশ মালদ্বীপ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফর করলেও নেপালে যায়নি।

ভারতের সেনাপ্রধানের সফরের আগ দিয়ে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সফর এবং প্রধানমন্ত্রী ওলির সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নেপালের সাথে বোঝাপড়ার বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক পর্যায়ে ছেড়ে দিয়েছে। নেপালের জনসাধারণের একটি অংশ মনে করছে, ২০১৪ সালে মোদির নেপাল সফরের পর ভারত এই সম্পর্ককে রাজনৈতিক পর্যায়ে উন্নীত করলেও এখন আবার আমলাতান্ত্রিক পর্যায়ে ফিরে গেছে। অনেকে এই ঘটনাকে নেপালের রাজনৈতিক ধারায় অশুভ একটি ইঙ্গিত হিসেবেও দেখছে। তাদের অনেকে বিশ্বাস করে, গত কয়েক দশকে বেশির ভাগ অনিশ্চিত রাজনৈতিক যাত্রার প্রধান কারিগর ছিল ‘র’।

কাঠমান্ডুতে এই গুঞ্জনও রয়েছে যে ক্ষমতা থেকে ওলিকে বিদায় করার পরিকল্পনা করছে নয়াদিল্লী। তারা আবার জনতা সমাজবাদী পার্টির নেতা বাবুরাম ভট্টরাইকে প্রধানমন্ত্রী করতে চাচ্ছে। অবশ্য সে ইতোমধ্যেই গোয়েলের সাথে তার বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছে। অনেকে এই গুঞ্জনকে সত্য বলেই মনে করছে। গোয়েলের কাঠমান্ডু আসার মাত্র এক দিন আগে জনতা সমাজবাদী পার্টির (কেএসপি) ফেডারেল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে তার নাম আসার বিষয়টি তারা সামনে আনছে।

আবার নেপালি কংগ্রেসের (এনসি) একটি অংশ কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করতে বলেছে। তবে ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদদের একটি অংশ মনে করছে, ক্ষমতাসীন এনসিপি ও বিরোধী দলগুলো এসময় অনাস্থা প্রস্তাব আনবে এবং এর রেশ ধরে ওলিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রী ওলি জুলাই মাসে বাজেট অধিবেশন মুলতবি করে দিয়েছিল দলের অন্তঃদ্বন্দ্ব ও চেয়ারম্যান দহল ও দলের সিনিয়র নেতা মাধব কুমার নেপাল প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তার পদত্যাগ দাবি করার প্রেক্ষাপটে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত দিনেশ ভট্টরাই, সে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা ও শের বাহাদুর দিউবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছে, বলেছে যে নতুন মানচিত্র প্রকাশ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলার প্রেক্ষাপটে র-প্রধানের ভারত সফর ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় না। সে বলেছে, ১৭ বছর পর ২০১৪ সালে নেপালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের ফলে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে নেপালের সাথে সম্পর্ককে ভারত রাজনৈতিক পর্যায়ে উন্নীত করেছে। কিন্তু র-প্রধানের এই সফর ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার বৈঠক ওই ধারণা বদলে দিয়েছে।

নেপালের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা যুক্তি দিচ্ছেন যে নেপালের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের বেশির ভাগের মধ্যেই এই প্রবণতা রয়েছে যে তারা যখনই রাজনৈতিকভাবে বিপদের মুখে নিজেদের দেখতে পান, তখনই তারা ক্ষমতায় থাকাকে স্থায়িত্ব দিতে বাইরের, প্রধানত ভারতের সমর্থন কামনা করে। প্রধানমন্ত্রী তার নিজ দলে কোণঠাসা হয়ে আছে, প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলো তাকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। কার্নালি প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মহেন্দ্র বাহাদুর শাহিকে বরখাস্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে ওলির সাথে দহলের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। ওলি যেকোনো বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আরেক সিনিয়র নেতা মাধব কুমার নেপালের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছে।

কিন্তু এনসিপির সূত্র জানাচ্ছে, ওলি ও নেপালের মধ্যকার আলোচনায় কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। দল ও সরকার পরিচালনায় ওলির একতরফা সিদ্ধান্তগুলো মেনে নিতে পারছে না নেপাল। তাছাড়া ওলির এক নেতা, এক পদ নীতি বাস্তবায়ন করতে বলছে নেপাল। প্রধানমন্ত্রী ওলি এই আইডিয়ার বিরোধিতা করছে। কারণ সেক্ষেত্রে তাকে প্রধানমন্ত্রী ও পার্টির চেয়ারম্যান – এই দুই পদের একটি ছেড়ে দিতে হবে। এখানেই শেষ নয়, ওই নীতি বাস্তবায়িত হলে তার বিশ্বস্ত কয়েকজনকে দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর যেকোনো একটি ছেড়ে দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর গোয়েলের সাথে বৈঠক করে প্রটোকল লঙ্ঘন করেছে কিনা তা নিয়ে কাঠমান্ডুতে তুমুল বিতর্ক চলছে। আবার অনেকে পম্পেওর মালদ্বীপ সফর করলেও নেপালে না আসার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এটি কি ইঙ্গিত দেয় যে নেপাল এখন বিশ্ব ও আঞ্চলিক কৌশলগত রাডারে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে?

সূত্র: রিপাবলিকা